চলনবিলে নৌকাডুবি : বালক সুমন পুরস্কৃত উপেক্ষিত শাহনাজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০২:০৫ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চলনবিলে নৌকা ডুবির ঘটনায় পাঁচজন প্রাণ হারালেও গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন ও বালক সুমন হোসেনের বুদ্ধিমত্তায় বেঁচে যায় ১৭ জন। এ ঘটনায় পাবনা জেলা প্রশাসক বালক সুমনকে পুরস্কৃত করলেও উপেক্ষিত থেকে যায় গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন।

পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সুমনকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষা সহায়তা বাবদ নগদ পাঁচ হাজার টাকা এবং শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার, এএসপি (চাটমোহর সার্কেল) তাপস কুমার পাল, ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কোনো স্বীকৃতি পাননি গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন।

চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পাইকপাড়া গ্রামের গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন (৩৫) ও হান্ডিয়াল হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুমন হোসেন (১৪) জানায়, সন্ধ্যার কিছু আগে বিল থেকে ডিঙি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো সুমন। শাহনাজ পারভীন দাঁড়িয়ে ছিলেন নদীর তীরে। এমন সময় চলনবিলে বেড়াতে আসা ওই নৌকার ছইয়ে দাঁড়িয়ে সবাই সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। আকস্মিক নৌকার ছই ভেঙে উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই নৌকাটি। ফলে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে আর্তনাদ। এ সময় জীবন বাজি রেখে পাড়ে বেঁধে রাখা ডিঙি নিয়ে ছুটে যান শাহনাজ পারভীন। অন্যদিকে এগিয়ে যায় কিশোর সুমনও। তারা দুজনে একে একে তীরে তোলেন ডুবে যাওয়া নৌকার ১৭ যাত্রীকে। তবে নিখোঁজ হন পাঁচ যাত্রী।

এরপর শনিবার সকাল পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।

শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমার কোনো পুরস্কার লাগবি লয়, মানুষের জীবন বাঁচিছে ইডাতই আমি খুশি।’ তবে একজন মেয়ে মানুষ হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এতোগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচানোয় গ্রামবাসীরা শাহনাজ পারভীনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সত্যিই শাহনাজ পারভীন ও সুমন না গেলে আরও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো। সুমনকে ডিসি স্যার পুরস্কৃত করেছেন। তবে শাহানাজ পারভীনের বিষয়টি অগোচরেই রয়ে গেছে।

বেঁচে যাওয়া রফিকুল ইসলাম ও শফিউল বাশার নামের দুই নৌকা যাত্রী বলেন, তারা না থাকলে আমরা বাঁচতাম না। তারা দুজন আমাদের হাত ধরে নৌকায় তুলেছে। প্রাণে বাঁচিয়েছে। আমরা সবাই তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার বলেন, ডিসি স্যার সুমনের শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। আর তাৎক্ষণিক শাহনাজ পারভীনের ব্যাপারে কিছু জানা না গেলেও পরে শুনেছি, তিনিও নৌকা যাত্রীদের উদ্ধার করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাহনাজ পারভীনকেও সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

একে জামান/এএইচ/এসআর

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।