প্রত্যন্ত এক গ্রামে ‘কৃষি জাদুঘর’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ২৫ আগস্ট ২০১৮

নওগাঁর প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রামীণ জনপদে গড়ে উঠেছে ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর’। এটি এখন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবও পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত এটি দেখতে আসছেন বিনোদনপ্রেমীরা। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য দিন দিন যে নতুন যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হচ্ছে এতে কৃষির পুরনো হাতিয়ারগুলো আজ বিল্পুতির পথে। কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি এ কৃষি জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বিলুপ্তির পথে ওসব কৃষি উপকরণ দেখে উপকৃত হচ্ছেন পর্যটকরা।

নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কালীগ্রাম গ্রাম। গ্রামে প্রবেশপথে তীর চিহ্ন দিয়ে জাদুঘরের দিকে নির্দেশনা দেয়া আছে। ২০০৮ সালে শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ ব্যক্তি উদ্যোগে ৩ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেছেন ‘শাহ কৃষি জাদুঘর ও কৃষি লাইব্রেরি’। সেখানে প্রবেশ পথে বড় একটি লোহার দরজা। এরপর সুন্দর করে ফুলের গেট দিয়ে সাজানো অভ্যর্থনা গেট। গেটের ভেতর দিয়ে প্রবশে পথ। গেটে প্রবেশের বাম দিকে কৃষি জাদুঘর এবং ডান দিকে কৃষি লাইব্রেরি। আশপাশে রয়েছে বিভিন্ন ফলজ ও ঔষধি গাছ।

Naogaon-Agricultural

নয়টি ঘরের মধ্যে একটিতে জাদুঘর, লাইব্রেরি, গোলাঘর, খাবার ঘর, হেসেল ঘর ও অতিথিদের শোবার ঘর আছে চারটি। কৃষি লাইব্রেরিতে কৃষি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের বই সংরক্ষণ করা আছে। প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন ঔষধি ও দেড় শতাধিক ফলজ গাছ আছে। লাইব্রেরি দেখাশোনার জন্য রয়েছের জোসনা খাতুন এবং বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে রয়েছেন আজাহার হোসেন ও হজরত আলী।

কৃষি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে কৃষি সরঞ্জামাদি। আছে গরুর গাড়ি, গরুর গোমাই, মাথাল, ঢেঁকি, মই, নাঙল, জোয়াল, পানি সেচের যন্ত্র, পালকি, নৌকা, কোদাল, কাস্তে, ঝাড়ু, দাউল, দিদা, তেলভাঙা ঘানি, বায়োস্কোপ, বাঁশের তৈরি টোপা, মাছ ধরার যন্ত্র, ধান রাখার মাটির তৈরি বড় বড় হাঁড়ি (মটকি), ধান মাড়াই মেশিন, কীটনাশক স্প্রে মেশিন, শ্যালো মেশিন, গোলাঘর ইত্যাদি।

কৃষি তথ্য পাঠাগার থেকে কৃষকরা বই পড়ে তাদের ফসলের সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। কৃষি বিষয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন হলে এলাকায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে কৃষকদের দেখানো হয়। এতে করে খুব সহজেই কৃষি বিষয়ে নতুন বিষয়ে ধারণা পান কৃষকরা। এছাড়া এখানে রয়েছে ছোটদের জন্য গল্প ও ছড়ার বই।

Naogaon-Agricultural

ঈদের দ্বিতীয় দিনে জাদুঘরে সপরিবারে কালীগ্রাম গ্রামে বেড়াতে আসেন আহসান উল্লাহ। তিনি বলেন, গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। সেখানে শুনলাম এখানে কৃষি জাদুঘর আছে। তাই সবাইকে নিয়ে জাদুঘরটি দেখতে এসেছি। আমার ছেলে-মেয়েরা তো জানে না, কৃষিতে কি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। শুধু বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জাদুঘরে এসে সরঞ্জামগুলো দেখতে পেলো তারা। এখান থেকে তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আগামী প্রজন্ম হয়তো কৃষি সরঞ্জাম দেখতে পাবে না। কিন্তু এ জাদুঘরে আসলে কিছুটা ধারণা পাবে।

শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের পরিচালক শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে কৃষি বিষয়ে জানতে এবং বই পড়তে হবে। এজন্যই এমন পদক্ষেপ নেয়া। আমার স্বল্প জায়গায় কিছুটা হলেও কৃষি যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করেছি। কৃষি বিষয়ে কৃষকের মাঝে যে অভাব রয়েছে তা এখন উপলদ্ধি করা যায়। লাইব্রেরিতে এসে কৃষকরা তাদের সমস্যার বিষয়ে বই পড়ে সমাধান পান। সে অনুযায়ী চাষাবাদে পদক্ষেপ নেন কৃষকরা।

আব্বাস আলী/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।