নিঃস্ব হওয়ার অপেক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার
‘সাত বিঘা জমি ছিল কিন্তু সব জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভিটেবাড়িও নদীতে চলে যাচ্ছে। অন্য কোথাও জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘরেই আছি’। অশ্রুসিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন দাস (৭০)।
উপজেলার চৈতন্যগঞ্জে ধলাই নদীর বুকে অর্ধেক ঝুলে থাকা ঘরে পরিবারের ১৬ সদস্যকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। গত কয়েক বছরের বন্যা ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙনে এ বাড়ির অর্ধেক রয়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধে আর বাকি অর্ধেক ঝুলে রয়েছে ধলাই নদীর বুকে। যে কোনো সময় ঝুলন্ত ঘর ভেঙে নদীতে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন দাস জাগো নিউজকে জানান, কয়েক বছর আগে চৈতন্যগঞ্জ এলাকায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও তার বাড়িতে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে বাড়ির পাশের খালি জমি, এরপর বাড়ির এক সময়ের বসতঘর ভাঙতে শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার গত বছর তার বসতঘরের নিচে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙনরোধের ব্যবস্থা নিলেও সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে বালুর বস্তা সরে গিয়ে তার বাড়িটি এখন ধলাই নদীর বুকে ঝুলে আছে। আর্থিক দৈন্যতার কারণে অন্যত্র নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করে সরে যেতে পারছেন না।
তিনি আরও জানান, তার বাড়িসহ এই এলাকা এবং চৈতন্যগঞ্জে ধলাই সেতুও ঝুঁকিতে রয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, গত প্রায় ১০ বছরে চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের ধলাই নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে অসংখ্য বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার জমিজমা ও বসতঘর হারিয়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন দাস সপরিবারে ঝুঁকির মাঝে বসবাস করছেন।
নিরঞ্জন দাসের ছোট ভাই নবদ্বীপ কুমার দাশ জানান, শুধু নিজের ঘর নয় ইতিমধ্যে তাদের গোয়াল ঘরও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নিরঞ্জন দাসের স্ত্রী খেলা রানী দাস জানান, তিন দেবর, জা, ছেলে-মেয়ে সহ ১৬ জনের সংসার। কয়েক বছর আগে অনেক কষ্ট করে পাকা বাড়ি তৈরি করেছিলেন তার স্বামী ও দেবর। চোখের সামনেই সেই ঘরের অর্ধেক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ঝুলে থাকা ঘরেই সন্তানাদি নিয়ে বসবাস করছেন।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, নিরঞ্জন দাসকে বাড়ি তৈরি করে দেয়ার তহবিল ইউনিয়ন পরিষদের নেই। তবে এ বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জাগো নিউজকে জানান, নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষা ও বন্যা প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাবনা অনুমোদন হলে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে। তখন এ সমস্যা থাকবে না। একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
রিপন দে/আরএআর/জেআইএম