কে নেবে বাবা হারা ৩ মেয়ের দায়িত্ব?

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৮

ফের রক্ত ঝরল পাহাড়ে। সবুজ পাহাড় প্রতিহিংসার স্রোতধারায় আবারও রক্তাক্ত। গভীর অরণ্যের সীমানা ছাড়িয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘটছে হামলার ঘটনা।

তবে এসব আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সন্ত্রাসীদের গুলিতে বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন একজন মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী জীতায়ন চাকমা।

শনিবার (১৮ আগস্ট) সকালে বাড়ির পাশেই স্বনির্ভর বাজারে নাস্তা করতে যান জীতায়ন চাকমা। নাস্তা করে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। সেখানেই সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। তার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে পুরো স্বনির্ভর এলাকায় শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীদের বুলেট শুধুমাত্র জীতায়ন চাকমার জীবনই কেড়ে নেয়নি। একইসঙ্গে অভিভাবকহীন হয়েছে একটি পরিবার।

স্ত্রী আর তিন কন্যাসন্তানের হাসিখুশির সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জীতায়ন চাকমা। বড় মেয়ে জুলি চাকমা ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে ডিপ্লোমা পাস করেছেন। মেজ মেয়ে পলি চাকমা খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে অন্বেষা চাকমা খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

‘আমার নিরপরাধ বাবাকে কেন খুন করা হলো? আমাদের দায়িত্ব কে নেবে? আমার ছোট দুই বোনের লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে? কিভাবে চলবে আমাদের পরিবার?’ কান্না করতে করতে এভাবেই প্রশ্নগুলো ছুড়লেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী জীতায়ন চাকমার মেয়ে জুলি চাকমা।

একইসঙ্গে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং বোনদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য একটি সরকারি চাকরি চেয়েছেন জুলি চাকমা।

রোববার সকালে নিহত জীতায়ন চাকমার বাড়িতে গেলে এসব কথা বলেন তার মেয়ে জুলি চাকমা। পাশেই অঝোরে কাঁদছিল ছোট বোন অন্বেষা চকমা। বাবার মরদেহের পাশে চুপচাপ বসেছিল পলি চাকমা। তার চোখে-মুখে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি।

জীতায়ন চাকমার স্ত্রী প্রভাতি চাকমা বলেন, সকালে নাস্তা করতে বের হয়ে মানুষটা আর ফিরবে না তা কি জানতাম। যদি এমন হবে জানতাম তাহলে তাকে বাসা থেকে বের হতে দিতাম না।

স্বামীর আয়ে সংসার চলে জানিয়ে প্রভাতি বলেন, তিন মেয়েই পড়াশোনা করছে। এখন কীভাবে আমার সংসার চলবে। কিভাবে মেয়েরা পড়বে? কেন নিরপরাধ মানুষটাকে মরতে হলো। কার কাছে বিচার চাইব।

তখনো বাড়িজুড়ে স্বজন হারানোর শোক। পাশাপাশি চলছে শেষকৃত্যানুষ্ঠানের প্রস্তুতি। সেখানেই কথা হয় নিহত জীতায়ন চাকমার স্বজন ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল চাকমার সঙ্গে।

জুয়েল চাকমা বলেন, সন্ত্রাসীদের বুলেটের কাছে একটি পরিবার পরাজিত হয়েছে। নিঃস্ব এই পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও ভুক্তভোগী পরিবারের দায়িত্ব নেয়া জরুরি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।