দক্ষ চালক তৈরি করছে অদক্ষ প্রশিক্ষক!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০১:৪৮ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন প্রশিক্ষকরাই রাজশাহীর বিভিন্ন চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছেন। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নেই আধুনিক ট্রেনিং কার, এমনকি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। ফলে চালকরা অদক্ষ হয়েই গড়ে উঠছেন। তবে এ নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শিগগিরই এ নিয়ে অভিযানের নামার কথাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৯৭৪ সালে গড়ে ওঠে নগরীর বিলসিমলা এলাকায় রাজশাহী মোটর ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক ট্রেনিং স্কুল। অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ৩৭ বছর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে অনুমোদন পায়। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এমদাদুল হক বকুল। বিআরটিএ নিবন্ধিত প্রশিক্ষকও তিনি। ৮৫ বছর বয়সী বকুল এখন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। প্রতিষ্ঠানে এলেও প্রশিক্ষণ কাজে অংশ নেন না তিনি। তবে অদক্ষ প্রশিক্ষক দিয়ে দিব্যি প্রশিক্ষণ চালিয়ে নিচ্ছেন।

রোববার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে অফিস সহকারী আলম নবীকে পাওয়া গেলো। তিনি ওই সময় দুই প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক কিনা জানতে চাইলে জানান, মাঝে মধ্যে তত্ত্বীয় পাঠ নেন তিনি। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস। তিনি নিজেও মোটর ড্রাইভিং জানেন না।

আলম নবীর দাবি, আরেক প্রশিক্ষক আবু বকর ব্যবহারিক পাঠ নেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসহ তার প্রশিক্ষক নিবন্ধন নেই। নেই মাঝারি ও ভারি মোটরযান চালানোর অভিজ্ঞতাও। একটি ট্রেনিং কারে প্রশিক্ষণ দেন তারা। সেটিও বহু পুরনো। নেই ফিটনেস। নিজেদের মাঠ না থাকায় ব্যস্ততম রাস্তায় চলে প্রশিক্ষণ। একই চিত্র নগরীর শেখপাড়া ফায়ার সার্ভিস মোড় এলাকার সেবামূলক মোটর ড্রাইভিং ও মেকানিক স্কুলেরও।

Rajshahi-Pic

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবদুর রশিদ নিজেই প্রশিক্ষক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তারও প্রতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তার এবং প্রতিষ্ঠানের কোনোটারই নিবন্ধন নেই। সড়কের পাশের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান। একটি মাত্র পুরনো ট্রেনিং কার থাকলেও সেটি রাখার জায়গা নেই। মাঠ না থাকায় তিনিও নগরীর রাস্তায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

নগরীর ভদ্রা মোড়ের একটি ছোট্ট কামরায় গড়ে উঠেছে ফ্রেন্ডস মোটর ড্রাইভিং স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক কামাল হোসেন পলাশ। একটি ট্রেনিং কার নিয়ে তিনিও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সড়কে। ২০১০ সাল থেকে এভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন তিনি।

এই প্রশিক্ষক জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে তার বাবা আবুল কাশেম এই প্রতিষ্ঠান চালাতেন। পরে তিনি এর দায়িত্ব নেন। প্রতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও দীর্ঘদিন ভারি যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

নগরীর চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি স্বল্পমেয়াদি কোর্সে চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। মান ভেদে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ ফি নেয়া হচ্ছে। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রশিক্ষনার্থীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এরপর ১৫-২০ দিনেই মানহীন চালক তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কোর্স শেষে সনদও মিলছে এখানে। যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকায় এসব চালকই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।

Rajshahi-Pic

তবে ভিন্নচিত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকটি কোর্সে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রাজশাহী টিটিসি। স্বল্প খরচে এমনকি নিখরচায় মানসম্মত প্রশিক্ষণ মিলছে এখানে। প্রশিক্ষকদের আলাদা প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহবুবুর রশীদ তালুকদার বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত এবং বেকারত্ব দূর করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এরই অংশ হিসেবে চালু রয়েছে এসব কোর্স।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি চালু হয়েছে বিনামূল্যের চালক প্রশিক্ষণ কোর্স। এতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাতায়াত ভাতা এবং লাইসেন্স ফিও দিচ্ছে সরকার। মূলত শিক্ষিত যুবকরাই এই প্রশিক্ষেণে এগিয়ে আসছেন। দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারীদের।

বিআরটিএর রাজশাহী অফিস প্রধান ও সহকারী প্রকৌশলী (ইঞ্জিন) এএসএম কামরুল হাসান জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি মাসেই পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে অনুমোদনহীন চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নজরদারির বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের খবর তাদের কাছে নেই। খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।