নিশাচর লজ্জাবতী বানর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৩:১৫ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৮
ছবি: আদনান আজাদ

নাম লজ্জাবতী বানর তবে বাদরামির লেশমাত্র নেই। লজ্জায় শরমের এক প্রতীকী ছবি দেখা যায় তাদের মাঝে। দিনের বেলায় দুই পায়ের মাঝখানে মাথা গুজিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। অনেক এলাকায় এদেরকে মুখচোরা বানরও বলে। তবে বানর প্রজাতির মধ্যে এরা আবার শামুক বানরও বলে পরিচিত। এরা মাঝে মধ্যে গাছের মগ ডালে পা দিয়ে আকড়ে ধরে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। ঘন চির সবুজ বনে এদের বসবাস। চলাচল করে খুব ধীরস্থিরে। দিনের বেলায় বের হয় না, নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করে। যত্রতত্র ঘুরাঘুরি করে না, নিজের এলাকায় ছেড়ে যেতে চায় না।

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রেমা কালেঙ্গা বনবিট, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ সিলেট ও চট্টগ্রামের ঘন সবুজ বনে এদের দেখা যায়। তবে সে দেখা খুব হাতে গুনা। কারণ এরা নিশাচর প্রাণী এবং দিনের বেলায় গহীন বনের জঙ্গলের ভেতর এক জায়গায় শামুকের আকার ধারণ করে বসে থাকে। পরিবারসহ এদের দেখা মিলা খুব বিরল ঘটনা।

mulavibazer

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল হাসান খান জানিয়েছেন, উনার প্রাপ্ত তথ্য মতে বাংলাদেশে একমাত্র প্রাণিজগতের আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ লজ্জাবতি বানরের বাচ্চা-কাচ্চাসহ এক সঙ্গে দেখতে পেয়েছেন এবং তাদের ছবি তুলেছেন। তবে তাদের সংখ্যা কত প্রাণিবিদদের কাছে এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে এদের সংখ্যা। কিছুদিন যাবৎ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হাসান আল-রাজী চয়নের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এদেরকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাণিজগতের বেশিরভাগ প্রাণী আজ বিরল বা বিপন্ন প্রজাতিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। আর দিনে দিনে যত বেগে প্রাণী কমছে তত বেগেই প্রকৃতি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ভারসাম্য। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে তা মানব সমাজের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বৈচিত্রময় সুন্দর প্রাণী জগতের অন্যতম সুন্দর এ প্রাণিদের একটি হচ্ছে লজ্জাবতী বানর। লজ্জাবতী বানর বনের ঝোপঝাড়ে তেমন একটা নামে না এরা লম্বা গাছগুলোর মগডালে থাকে।

mulavibazer

প্রাণিজগতের আলোকচিত্রী ও বণ্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ জাগো নিউজকে জানান, লজ্জাবতী বানর নিশাচর প্রাণী। বছরে একবার একটি করে বাচ্চা দেয়। ইংরেজি নাম Slow loris এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nzcticebus coucang। গহীন সবুজ বনের ভেতরে লম্বা গাছের মগডাল থেকে গাছের কচিপাতা, গাছের আটা, কষ, ছোট ছোট পোকামাকড়, ছোট পাখি ও এবং বিভিন্ন প্রাণিদের ডিম এদের খাদ্যের তালিকায়ে রয়েছে। তবে অন্য বানরের মতো হাত দিয়ে খায় না পাখির মতো সরাসরি মুখ লাগিয়ে খায়। খুব শান্ত স্বভাবের। অন্যান্য বন্য প্রাণীর চেয়ে তারা বেশ ধীরে চলে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে দিনে এরা চলাচল করে না। অন্য প্রজাতির বানরের চেয়ে এদের লেজ খুবই ছোট সাধারণত ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। যা দূর থেকে তেমন একটা চোখে পড়ে না। সাধারণত একটা করে বাচ্চা দেয়।

রিপন দে/আরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।