মিলছে না সনদ, বডি বদলে বিপাকে বাস মালিকরা
কাঠামো বদলানো যাত্রীবাহী বাস নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন রাজশাহীর বাস মালিকরা। এসব বাসের ফিটনেস সনদ দিচ্ছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আর রাস্তায় নামলেই ধরপাকড় করছে পুলিশ। মোটরযান আইনে হচ্ছে মামলাও। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে অধিকাংশ বাস বন্ধ রাখছে মালিকপক্ষ।
বাস মালিকরা বলছেন, কাঠামো বদলে আগে ঠিকই ফিটনেস সনদ পাওয়া গেছে। বিআরটিএর এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা ওই ছাড়পত্র পান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর বেঁকে বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এখন আর ফিটনেট সনদ দিচ্ছে না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর কয়েকজন বাস মালিক জানান, চালকের আসনসহ ৩২ আসনের চ্যাসিসে ইচ্ছেমত ৪০ থেকে ৪৬ আসনের বডি তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহীতেই ইচ্ছেমত বডি বানিয়ে নিয়েছেন তারা। তবে এখন আর নতুন করে কাঠামো বদলানো বডি তৈরি হচ্ছে না।
মালিকদের এমন বক্তেব্যর সত্যতা পাওয়া গেছে নগরীর ভদ্রা এলাকার কয়েকজন বডি প্রস্তুতকারকের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানিয়েছেন, মালিকপক্ষ যেভাবে চেয়েছেন তারা সেভাবে বডি তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন নতুন করে চেসিস বাড়িয়ে বডি তৈরি হচ্ছে না। কেবল মেরামত এবং রঙের কাজ হচ্ছে। ফিটনেট সনদ নিতে টুকটাক মেরামত করছেন মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী-তানোর-আমনুরা, রাজশাহী-ভবানীগঞ্জ, রাজশাহী-বাঘা, রাজশাহী-তাহেরপুর রুটে চলাচলকারী বাসের প্রায় সবই কাঠামো বদলানো। মিনিবাসের চ্যাসিসে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক বাস চলছে এসব রুটে।
এর বাইরে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী-নওগাঁ, রাজশাহী-পাবনা ও রাজশাহী-নাটোর রুটেও চলছে এসব বাস। এসব বাসের মধ্যে একটি বড় অংশ ফিটনেসবিহীন। আসনের বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে প্রতিদিনই চলাচল করছে এসব বাস।
যদিও মালিকদের দাবি, প্রতিবছরই নতুন-পুরাতন এমন বাসের ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট দিয়েছে বিআরটিএ। ফলে কাঠামো পাল্টেও রাস্তায় দিব্যি চলেছে এসব যান।
রাজশাহী-ভবানীগঞ্জ রুটের চেইন মাস্টার কামাল উদ্দিন স্বীকার করেন, এসব রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর সবগুলোই কাঠামো বদলানো। লক্কড়-ঝক্কড়। ফলে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে ত্রুটিপূর্ণ এসব যানের কারণে।
রাজশাহী-ভবানীগঞ্জ রুটে চলাচল করছে জাহিদ এন্টারপ্রাইজের একটি মিনিবাস (ঢাকা মেট্রো জ-০৪-০২৩৯)। কাঠামো বদলে ৩৪ আসন করে করেছে মালিক। দুই বছর ধরে এই গাড়িটি চালাচ্ছেন সুইট বিশ্বাস। তিনি বলেন, কেবল হালনাগাদ ফিটনেট সনদ নেই গাড়িটির। তাছাড়া অন্যান্য সব কাগজপত্রই আছে। ফিটনেস সনদ নিতে বৃহস্পতিবার বিআরটিএতে গিয়েছিলেন মালিক। কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছে বিআরটিএ।
তিনি আরো বলেন, ফিটনেস সনদ না থাকায় গত দশদিন ধরে রাস্তায় নামানো হয়নি গাড়িটি। কিন্তু মালিককে না জানিয়েই নিজ দায়িত্বে তিনিই রাস্তায় নেমেছেন। পেটের দায়ে অনেক চালক মালিককে না জানিয়ে এভাবে রাস্তায় নেমেছেন।
তার দাবি, দু-একটি বাদে অভ্যন্তরীণ সকল রুট এবং আন্তঃজেলার কয়েকটি রুটে কাঠামো বদলানো বাস চলাচল করছে। তারা কেবল দুটি সিট বাড়িয়েছেন। কিন্তু অনেকেই ৪০ থেকে ৪৬ আসন তৈরি করেছেন। ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলাচল করছে এসব বাস।
তবে এনিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুনজুর রহমান পিটার। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হালনাগাদ ফিটনেস সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গাড়িতে রাখতে বলেছেন তারা। গ্রুপভুক্ত মালিকদের তারা বিষয়টি আগেভাগেই জানিয়েছেন। এরপরও যারা চলাচল করছেন নিজ দায়িত্বেই। এরা আইনি কিবাং প্রশাসনিক জটিলতায় পড়লে পরিবহন গ্রুপ দায়িত্ব নেবে না।
বিআরটিএর রাজশাহী অফিস প্রধান ও সহকারী প্রকৌশলী (ইঞ্জিন) এএসএম কামরুল হাসান বলেন, নিয়ম মেনেই তারা যান চলাচলের বৈধতা দেন। কাঠামো পাল্টে ফেলা যানবাহনের ফিটনেস সনদ দিচ্ছেন না তারা। এ ক’দিনে ফিটনেস সনদ নিতে আসা বেশিরভাগ মালিকই ফিরে গেছেন। যারা ফিটনেস সনদ ছাড়াই রাস্তায় নামছেন তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন।
বিআরটিএ রাজশাহী অফিস জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত চালকদের নতুন লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে ৪১০টি। এ ক’দিনে নবায়ন হয়েছে ১৯৫টি লাইসেন্স। শিক্ষানবিস লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে ৩৯৫টি। এছাড়া ১৫৮টি যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের সড়কে চলাচল করছে বিআরটিএর অন্তর্ভুক্ত ৫৭৬টি মিনিবাস ও ৩৬৮টি বাস। হালকা যানের মধ্যে চলাচল করছে ৪১৫টি মাইক্রোবাস, এক হাজার ১৫টি প্রাইভেট কার এবং ৩০২টি জিপ। এছাড়া এক হাজার ১৮৫টি ট্রাক, ১৫৬টি মিনি ট্রাক, ৩৫০টি পিকআপ এবং ৫৩২টি হিউম্যান হলার চলছে সড়কে। এর বাইরে ৯৭ হাজার ৫১ মোটরসাইকেল রয়েছে এ অঞ্চলে।
এফএ/এমএস