ফতুল্লায় ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় ৯ জন গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ফিল্মি স্টাইলে বাস থামিয়ে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম হত্যাকেণ্ডের ঘটনায় ৯ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে চারটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ম্যাগজিন ও ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. লিটন (২৮), আনোয়ার হোসেন (৪৬), মিজানুর রহমান, আনোয়ারুল ইসলাম সাকিল (২০), শামীম হোসেন (১৮), শাকিল আহম্মেদ (১৮), ফারুক হোসেন (২২), বাবু (২৭) ও হাবিবুর রহমান স্বপন (৩২)। শুক্রবার রাত হতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত নয়জনই ব্যবসায়ী নুরুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি-না এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে তারা পেশাধার অপরাধী এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে নুরুল হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারটি পিস্তলসহ গ্রেফতারকৃতদের তথ্য শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দার মহিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান।
সংবাদ সম্মেলন পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন জানান, ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম হত্যার পর আমাদের পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে মাঠে নেমে দিন রাত কাজ শুরু করে। আর এই অভিযানে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যারা পেশাদার ছিনতাইকারী ও অস্ত্রবাজ। এসব লোকজনই মূলত বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করে থাকে। আমাদের ধারণা এ ৯ জনের কয়েকজন ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামকে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আরো তথ্য জানতে রিমান্ড চেয়ে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হবে। আশা করছি খুব শিগগিরই নুরুল ইসলাম হত্যার ব্যাপারে আসল তথ্য প্রকাশ করতে পারবো।
পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন আরো বলেন, নুুরুল ইসলামকে হত্যার পিছনে কারণ হিসেবে আমরা জানতে পেরেছি একটি ব্যাগ। ওইদিন নুরুল ইসলামের সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল। যে ব্যাগে বিশেষ মূল্যবান কোনো জিনিস ছিল। মূলত ওই ব্যাগটিই এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। তবে কী ছিল বা কী পরিমাণ মূল্যবান জিনিস ছিল তদন্তের সার্থে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। এর জন্য সময় লাগবে। তিনি আরো বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে এবং কেন ঘটিয়েছে তা খসড়া আমাদের কাছে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান (অপরাধ), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন, ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান, ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল, ফতুল্লার মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত আব্দুর রাজ্জাক, ফতুল্লা মডেল থানার এসআই নাহিদ, এএসআই কামরুল হাসান, এএসআই সাইফুল মালেক প্রমুখ।
প্রসঙ্গত গত ৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকাতে নারায়ণগঞ্জগামী উৎসব পরিবহনের বাস থামিয়ে নুরুল ইসলাম (৪০) নামের ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ নিহতের দুই সহযাত্রী সাইফ ও লিটন এবং উৎসব পরিবহনের চালক ও হেলপারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা করেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাটি খবুই পেশাদার কোনো বাহিনীর কাজ। কারণ বাসটিতে সিটের তুলনায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল তাও ৬০ জনের মতো। রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বাসটি ছেড়ে ফতুল্লায় সাইনবোর্ড পার হওয়ার পরেই অন্ধকার একটি স্থানে ১৪-১৫ জন দুর্বৃত্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বাসটি থামায়।
পরে মুহূর্তের মধ্যে বাসে কয়েকজন অস্ত্রধারী উঠেই সামনের সিটে থাকা একজনকে গুলি করে। তখন আমরা সকলে ভীত হয়ে পড়ি। পরে দেখি দ্রুত অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠে এভাবে একজনকে হত্যা করা দুঃসাহসিক কাজ। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই অপরাধীরা এমন দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটিয়েছে।
শাহাদাৎ হোসেন/বিএ