চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন পানির ট্যাংকে নেমে দুই ভাইসহ ৩ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন পানির ট্যাংকে পড়ে এক শিশুসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১০ আগষ্ট) বিকেলে নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা ডিজেল কলোনিতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সিফাত (১২), মো. রুবেল প্রকাশ দানিস (১৮) ও ইমরান হোসেন ইমু (২৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, শুক্রবার হওয়ায় পাড়ার সবাই মেতে উঠেছিলেন ফুটবল খেলায়। দুই ভাই দানিস আর ইমুও ছিল সেই দলে। খেলার এক পর্যায়ে বল চলে যায় মাঠের বাইরে। সে বল খুঁজতে গিয়েছিল সিফাত। তাকে ফিরে আসতে না দেখে এগিয়ে যায় দানিশ। ছোট ভাইও ফিরে না আসায় এগিয়ে যায় বড় ভাই ইমু। কিন্তু কেউ আর ফিরে আসেনি। রিজার্ভ ট্যাংক থেকে বল তুলতে গিয়ে করুণ মৃত্যু হয়েছে দুই ভাইসহ তিন জনের।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার থাকায় পাড়ার কলোনি মসজিদ মাঠে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বড়রাও ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছিলেন। পাশেই মসজিদের পানি ধরে রাখার জন্য মাসখানেক আগে একটি ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে সেটি খালিই আছে। খেলার এক পর্যায়ে ফুটবলটি ট্যাংকে পড়ে গেলে তা আনতে যায় শিশু সিফাত।
কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও সিফাত উঠছে না দেখে ওই ট্যাংকে নামে দানিশ। এরপর ছোট ভাই দানিশকে উঠে আসতে না দেখে বড় ভাই ইমুও তড়িঘড়ি করে তাতে নেমে পড়ে। কিন্তু তারা কেউ উঠে আসছে না দেখে অন্য শিশু কিশোররা চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করে। এতে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে জানতে পারে ট্যাংকে তিনজন ঢুকলেও বের হয়নি কেউ। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, দুই জন উঠে না আসার পর ইমু যখন ট্যাংকিতে নামছিল তখন অন্যান্যরা তাকে মানা করলেও সে কারও কথা শোনেনি। ভাইকে উদ্ধারে নেমে নিজেও হারিয়ে গেল ইমু।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দীন বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সেপটিক ট্যাংকে তিনজন আটকা পড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তাবে আমারা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেপটিক ট্যাংকটি নির্মাণাধীন এবং উপরে কাঠের তক্তা দিয়ে ঢাকা ছিল। মূলত গ্যাসের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।’
কিন্তু জাবেদ খান নামে অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন, সেপটিক ট্যাংকে একটি বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ ছিল। ঘটনার পর পুলিশ এসে লাইনটি কেটে দেয়। ওই তিনজন সম্ভবত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. আবদুল ওয়ারিশ খান বলেন, ‘রিজার্ভ ট্যাংকের গভীরতা কত, সেখানে গ্যাস জমেছিল কি-না অথবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল কি না সেগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। ’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হামিদুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে পাঁচটার দিকে খুলশীর ঝাউতলা থেকে তিনজনকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তারপরও রুবেল হোসেন এবং ইমরান হোসেন ইমুকে তাদের পরিবার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, চমেক জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছেন, ওই তিন জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। ট্যাংকে থাকা গ্যাসের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
আবু আজাদ/এমএমজেড/এমএস