উন্নয়ন কাজে স্কুলমাঠ ব্যবহার, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ৯০০ শিক্ষার্থী
দিনাজপুরের সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের করিমুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও করিমুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে চলছে সড়ক উন্নয়নের কাজ। কাপেটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত বিটুমিন মেশানোর মেশিনের কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি, মেশিনের শব্দের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যে কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া স্কুল দুটির ৯০০ শিশু শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাইমারি স্কুলটিতে শব্দ দূষণের কারণে দরজা বন্ধ করে মডেল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা না করেই কোনো এক অদৃশ্য স্বার্থের কারণে বিদ্যালয়ে মাঠ ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে। যাতে করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হবেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ডাইলার মোড় থেকে করিমুল্লাপুর হয়ে কাশিমপুর মুড়ি পুকুর পর্যন্ত সড়কে কাপেটিংয়ের কাজ চলছে। কাজটি করছেন মেসার্স মাহিবুল ইসলাম এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ১৩ জুন থেকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করিমুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও করিমুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পাথর, বালি, বিটুমিনের ড্রাম, ক্রাশার মেশিন, বিটুমিন মেশানোর মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কাজ শুরু করেছে। যে কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সরেজমিনে স্কুল দুটিতে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় প্রাইমারি স্কুলটিতে মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। টিফিনের সময় বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালো ধোঁয়ার ও ধুলা বালুর কারণে তাদের কষ্ট হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে ক্লাস করতে হচ্ছে। পাথর বালি আর মেশিনের কারণে আমরা মাঠে খেলতে পারছি না। মাঠে ভারী যানবাহন চলাচল করায় ও মেশিন স্থাপন করায় মাঠটি কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে আছে। চলাচল কিংবা খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। ধোঁয়ার গন্ধে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করে। চোখ, মুখ ও চুলে ধুলা বালির স্তর জমে যায়।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিকরা জানান, স্কুল মাঠে কাজ করলে স্কুলের বাথরুম, ক্লাস রুম ব্যবহার করা যায়। মালামাল নিরাপদে থাকে। তাই ঠিকাদার কাজের জায়গা হিসেবে স্কুলের মাঠ পছন্দ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিনুর ইসলামকে স্কুলে না পেয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে স্কুল কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সেসময় প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, আমাকে চেনেন, আমি ১৫ বছর ধরে রাজনীতি করি, বাচ্চাদের অসুবিধা হলে, আপনাদের অসুবিধা কী ? এখানে কেন এসেছেন ? এদিকে তাকাবেন না, অন্যদিকে তাকান । হুইপ সাহেবের ওয়ার্ডার আছে ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, উন্নয়ন কী হবে তা আমরা জানি না। কিন্তু বিদ্যালয়ের পরিবেশ এতটাই খারাপ হয়েছে যে, আমাদেরকে ক্লাসের দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকারে ক্লাস ও পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। শিশুরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, আশে পাশে কোনো জায়গা না পাওয়ায় স্কুলের মাঠটি ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি আমলে না নিয়ে বলেন তাহলে ওই রাস্তাটির কাজ বন্ধ করে দিতে হবে।
অথচ আশে পাশে হাজার হাজার একর জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
এমদাদুল হক মিলন/আরএ/পিআর