৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০৬:২৫ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০১৮

ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির উপর গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। নদীর তীরে গড়ে ওঠা সোনাগাজী-মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ-উদ্দিপনার কমতি নেই।

জেগে ওঠা চরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার পর থেকে পাল্টে যাচ্ছে এ অঞ্চলের জীবনধারা। পাল্টে যাচ্ছে পরিবেশ, পাল্টে যাচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা।

সোনাগাজী উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই ইকোনোমিক জোনের মূল কার্যক্রম চলছে। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে এই দীর্ঘ পথেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে চোখে পড়ার মতো। রাস্তার দু’ধারে ছোট বড় প্রকল্পের সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে।

যে রাস্তায় সাধারণ মানুষ দিনের বেলায় চলাফেরা করতে ভয় পেত, সেখানে আজ লোকে লোকারণ্য। আর এই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে সোনাগাজী পৌঁছে যাবে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে। অঞ্চলটিকে কেন্দ্র করে সোনাগাজী অংশে তৈরি হবে বিমানবন্দর, গড়ে উঠবে কলকারখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যালয়।

Feni

দেশের সর্ববৃহৎ এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ভূমি অধিগ্রহণের পর ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে শুরু হয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ। প্রাথমিকভাবে মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর ভূমিতে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথোরিটির আওতাধীন বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় কাজ শুরু হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে সোনাগাজী এলাকায় কাজ শুরু হবে। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান মিলবে প্রায় দশ লাখ মানুষের। ফলে দূর হবে বেকারত্বের দুর্দশা।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল আমিন কনস্ট্রাকশন ২৯ কোটি ৮০ লাখ ৬২ হাজার টাকার কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে কাজ হাতে নিয়েছে।

Feni

কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে ১ কোটি বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। যাদের জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে সেই সব ক্ষতিগ্রস্তদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং অনভিজ্ঞদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

এই শিল্প শহরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সমুদ্র বন্দর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, পানি শোধনাগার, আবাসিক এলাকা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে গ্রিন জোনে উন্নীত করতে এবং সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে পর্যায়ক্রমে ২০ লাখ গাছ রোপণ করা হবে।

৩০ হাজার একর জমির মধ্যে মীরসরাই উপজেলার এক হাজার ৩শ একর এবং সোনাগাজী উপজেলার ৭ হাজার একর জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

Feni

ইতোমধ্যে সাড়ে ৫০০ একর ভূমিতে কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠবে বিমানবন্দর, মিনি নৌ-বন্দর, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, অটোমোবাইলসহ ভারি শিল্প-কারখানা। স্থাপিত হবে ২০০টি কারখানা। প্রাথমিক পর্যায়ে এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

স্থানীয়রা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে মিরসরাই অংশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা শুনেছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে এ অংশের (সোনাগাজী) কাজ শুরু হবে। এটি শুরু হলে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দ্রুত কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

তারা আরও জানান, আমরা কল্পনাও করিনি এই চরাঞ্চলে এত বিশাল কাজ হবে। যেখানে মানুষের আনা-গোনা ছিল শুধুমাত্র চাষাবাদ আর মাছ ধরার জন্য। সেখানে এখন অনেক বড় বড় দালান শোভা পাবে। যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক উন্নত হবে। যেখানে আমরা ছিলাম অবহেলিত আজ এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করায় আমরাও দেশের সেরা একটি অঞ্চলে অবস্থান করছি।

Feni

সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন জাগো নিউজকে বলেন, এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম জানান, উপকূলীয় অঞ্চল সোনাগাজীতে জেড়ে ওঠা চরে দেশের বৃহত্তম শিল্প অঞ্চল গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’র (বেজা) তত্ত্বাবধানে এটি ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে অবহেলিত এ জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।

এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।