টেকনাফ দিয়ে কোরবানির পশু আমদানি নিয়ে সংশয়
পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র তিন সপ্তাহ। ঈদকে সামনে রেখে সপ্তাহ খানেক পরই বসবে পশুর হাট। কোরবানিতে চাহিদা অনুসারে দেশীয় পশুর যোগান হয় না। তাই চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়ে থাকে নানা আকারের পশু।
প্রতি বছরের মতো এবারও চট্টগ্রাম বিভাগের চাহিদা মেটাতে মিয়ানমার থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পশু আমদানি হওয়ার প্রতিক্ষায় রয়েছেন সবাই। সেভাবে টার্গেট নিয়ে আমদানিকারকরা শত কোটি টাকা দাদনও পাঠিয়েছেন মিয়ানমারে। কিন্তু কেনাবেচার দামে সামঞ্জস্য না থাকায় সীমান্ত ব্যবসায়ীরা শেষ পর্যন্ত চাহিদা অনুপাতে পশু আনবেন কি-না তা নিয়ে চরম সংশয় দেখা দিয়েছে।
কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত পক্ষকাল ধরে কেনা মূল্যের চেয়ে প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান দিতে হয়েছে সীমান্ত ব্যবসায়ীদের। ফলে, ঋণ ও দেনায় লগ্নি করা অর্থ উঠে না আসার আতঙ্কে অনেকে পশু আমদানি বন্ধ রেখেছেন। অনেকে আবার বাজার মনিটরিং করে সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
আর দামের তারতম্যের পরও শাহপরীরদ্বীপ করিডরে গত সোমবার সাতটি ট্রলারে ৯৪৪টি এবং মঙ্গলবার ৮৬ গবাদি পশু আমদানি করা হয়। যা থেকে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে শুল্ক বিভাগ।
টেকনাফ শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক বন্ধ থাকার পর ৩০ জুলাই একদিনে সাতটি ট্রলারে ৮৬৬টি গরু ও ৭৮টি মহিষসহ ৯৪৪টি এবং ৩১ জুলাই ৮৬টি গবাদি পশু আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৬ হাজার ১০৬টি পশু আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০১টি গরু ও ১ হাজার ৫০৫টি মহিষ। গত অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৭টি পশু আমদানি হয়। এর আগের অর্থ বছরে আমদানি হয় ৬৬ হাজার ৯৩৬টি পশু।
পশু ব্যবসায়ী স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শরীফ জানান, সোমবার করিডর দিয়ে আমার আনা ১০০ গরু বাংলাদেশে পৌঁছাতে প্রতি গরুর দাম পড়েছে ৪২ হাজার টাকা। সে গরু বিক্রি করতে হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা করে। এক দিনেই মূলধনের ৬ লাখ টাকা খোয়া গেছে। প্রতি ব্যবসায়ী বিগত মাসে এভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাই ইচ্ছে থাকলেও আমদানি বাড়ানো যাচ্ছে না।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কোরবানির ঈদের আর মাত্র বাকি ২১ দিন। কোরবানির ঈদের চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পশু আমদানি হবে এটা আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে যে পরিমাণ পশু আমদানি হয়েছিল চলতি বছরে তার সিঁকি ভাগও এখনো হয়নি।
টেকনাফ উপজেলা পশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ মনির বলেন, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পশু দেশের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। এখান থেকে পশু আমদানি কম হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পশুর সংকট পড়ে। কোরবানির ঈদে মিয়ানমারের পশুর উপস্থিতি কমলে দামের টানাপোড়েন পড়ে যায়। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পশু আমদানির টার্গেট রয়েছে।
তিনি বলেন, বৈরি আবহাওয়া ও অন্যদিকে কেনাবেচায় পশুর দামে তারতম্য হওয়ায় আমদানি আগের চেয়ে কম। দাম যাই হোক আমদানিকারক হিসেবে দায়িত্বের খাতিরে হলেও লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম