‘গডফাদার’ নির্মূলে কক্সবাজারে নতুন ১৫ প্লাটুন র‌্যাব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ এএম, ০১ আগস্ট ২০১৮

দেশের দক্ষিণ স্থল ও জল সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন দেশে ঢুকছে ইয়াবাসহ নানা মাদক। এটি বিভিন্ন উপায়ে দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা। যার সিংহভাগই তরুণ-তরুণী, রয়েছে শিক্ষার্থীও।

তাই দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষায় শুরু হয়েছে মাদকবিরোধী যুদ্ধ। গত ৪ মে থেকে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী এ অভিযানে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় দু'শতাধিক মাদক সংশ্লিষ্ট লোকজন নিহত হয়েছেন।

কিন্তু এরপরও থামছে না ইয়াবার আগ্রাসন। দেশের কোথাও না কোথাও চুনোপুটি মাদক ব্যবসায়ী বা বাহক ধরা পড়ছে প্রতিদিন। কিন্তু মূল ব্যবসায়ী, গডফাদার-গডমাদার ধরা না পড়ায় টেকনাফের নাফনদ, বঙ্গোপসাগর এবং স্থলভাগ পেরিয়ে প্রতিদিনই ঢুকছে ইয়াবা।

এবার মূল ব্যবসায়ী, গডফাদার-গড়মাদারকে কব্জায় নিয়ে সর্বনাশা ইয়াবা প্রবেশ রোধে টেকনাফে নতুন করে র‌্যাবের ৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এতে কাজ করছে ১৫ প্লাটুন র‌্যাব সদস্য।

কক্সবাজার শহর ও টেকনাফের বরইতলীতে স্থান নেয়া আগের ২টি এবং নতুন ৫টি ক্যাম্পের পথযাত্রা হিসেবে মঙ্গলবার কক্সবাজার শহর, রামু ও টেকনাফের মহাসড়কসহ মেরিন ড্রাইভে টহল দিয়েছে র‌্যাব সদস্যরা।

মঙ্গলবার বিকেলে শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শতাধিক গাড়িযোগে টহলটি শুরু হয়ে রামুর মহাসড়ক হয়ে মেরিনড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফ গিয়ে শেষ হয়।

Cox-RAB

র‌্যাব সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। নানা কৌশলে তারা দেশ থেকে ইয়াবা নির্মূল করতে কাজ করছে। এজন্যই ইয়াবার ট্রানজিট শহর হিসেবে পরিচিত টেকনাফে র‌্যাবকে শক্তিশালি করতে নতুন ক্যাম্পগুলো স্থাপন করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার বিসিক শিল্প নগরী ও টেকনাফের বরইতলী ক্যাম্পের পাশাপাশি টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড, বাহারছড়া ও হোয়াইক্যংয়ে নতুন ক্যাম্পগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, টেকনাফের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ২০ ইয়াবা ব্যবসায়ী সারাদেশের মোট ইয়াবা ব্যবসার ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে ট্রানজিট পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো খুব জরুরি। ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধ করতেই নতুন ক্যাম্পগুলো বসানো হয়েছে।

সূত্র মতে, জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন, যাদের মধ্যে টেকনাফ সদরে তালিকাভুক্ত বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৯৩ জন। তালিকার সবাই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহপরীর দ্বীপের ক্যাম্পটি হাজি বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছে। এখানে নাফ নদীর তীরসংলগ্ন এলাকায় বিজিবির একটি সীমান্ত চৌকি ও পুরান বাজার এলাকায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি স্টেশন আছে।

সাবরাংয়ের ক্যাম্পটি বসানো হয়েছে সাবরাং ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে। ওই ইউপির নাফ নদীর তীরে নয়াপাড়া এলাকা ও খুরেরমুখে বিজিবির দুটি সীমান্ত চৌকি রয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউপি ভবনে র‌্যাবের তৃতীয় ক্যাম্পটির অবস্থান। এর একটু সামনে নাফ নদীর কিনারে টেকনাফ বনবিভাগের রেস্ট হাউসের সামনে বিজিবির একটি তল্লাশি চৌকি ও টেকনাফ ২নং ওয়ার্ডের নাফ নদীর পাশে বিজিবির অপর একটি ক্যাম্প রয়েছে।

এছাড়া বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বসানো হয়েছে ৪র্থ ক্যাম্পটি এবং হোয়াইক্যংয়ের লম্বারবিল হাজী মোহাম্মদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে এসব ক্যাম্পে ৩ প্লাটুন করে মোট ১৫ প্লাটুন সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি রয়েছে ডগ স্কোয়াডও। জিরো টলারেন্সে থেকে আমরা সবার সহযোগিতায় কাজ করতে চাই। এতে বিশেষ সফলতা আসবে বলে আশা করেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।

Cox-RAB

এদিকে, গত ৪ মে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে শুরু হওয়া অভিযানের পর কক্সবাজারের টেকনাফেসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত বেশ কয়েকজন আইনশৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন। গা-ঢাকা দেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

এসব নিয়ে জেলায় একটা স্বস্তি দেখা দিলেও গত ২৭ মে দিবাগত কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের নোয়াখালিয়া পাড়ায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক। তার মৃত্যু নিয়ে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্ম হলে পুরো অভিযান নিয়েই নানা বিতর্ক জন্ম নেয়। থমকে যায় অভিযান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবার এলাকায় ফেরে ইয়াবা কারবারী। বাড়তে থাকে ইয়াবা পাচার।

এটি রোধ করতে গত ২৩ জুলাই র‌্যাব কর্তৃক নির্মিত মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন (টিভিসি) ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ প্রচারানুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে কক্সবাজার থেকে মাদকের চোরাচালান ও মাদকের লেনদেন ঠেকাতে দুই মাসের জন্য কক্সবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধের প্রস্তাব দেন পুলিশের এলিটফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

এরপর সম্প্রতি আরেক অনুষ্ঠানে ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধে সীমান্ত এলাকার মাদকের গডফাদার ও গড়মাদার ধরতে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় টেকনাফ সীমান্তে র‌্যাবের নতুন ৫টি ইউনিট যাত্রা শুরু করেছে এবং মঙ্গলবার এসব ইউনিট মহড়া দিয়ে তাদের অবস্থান জানান দেয়।

এটি দেখে সচেতন মহল এবং সাধারণ জনতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সবার চাওয়া নিরীহদের হয়রানি না করে আসল ব্যবসায়ীদের অভিযানের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।