৩০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৪:১৭ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

তরিকুল ইসলাম রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে আরও দুই নিকটাত্মীয়।

সকাল ১০টার দিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিরোপয়েন্টে পাওয়া গেল তাদের। সেখানে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন রিকশার অপেক্ষায় আছেন। এদের বেশিরভাগই জরুরি প্রয়োজনে নগরীর বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে চান।

নগরীর কোর্ট এলাকা থেকে রিকশা নিয়ে আসলেন দুই চালক। জিরোপয়েন্টে আসতেই অপেক্ষমান যাত্রীরা ছুটে গেলেন। কিন্তু কারো কোনো কথায় কান দিলেন না দুই রিকশাচালক। বললেন; সামনে গেলে চাকা পাংচার।

rajsahi

এর কিছুক্ষণ পর রিকশা নিয়ে আসলেন আরও এক চালক। প্রথমে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তরিকুল রিকশাচালককে অনেক অনুনয়-বিনয় করেন। একপর্যায়ে বলেন, কোনোরকমে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালি এলাকায় রেখে আসলেই হবে। অবশেষে যেতে রাজি হন রিকশাচালক। সেইসঙ্গে বলেন, ভাড়া দিতে হবে ৩০০ টাকা। এ নিয়ে রিকশা চালকের সঙ্গে বাদানুবাদ হয় তরিকুলের। কারণ ৩০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা চেয়েছেন রিকশাচালক। উপায় না পেয়ে ৩০০ টাকায় যেতে রাজি হন তরিকুল।

নগরীর মোন্নাফের মোড়ের বাসিন্দা আইউব আলী। সকাল সাড়ে ৮টায় জরুরি কাজে বাইরে বের হন। তিনি নগরীর কোর্ট এলাকায় থাকেন। সেখানকার ভোটারও তিনি। কাজ শেষে ভোট দিতে সেখানে যাচ্ছিলেন। হেঁটে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত যান। কিন্তু যানবাহন না পেয়ে আটকে পড়েন পথে। একই অবস্থা তুহিনুর আলম ও ওয়াবাইদুর রহমানের। তারাও রিকশা কিংবা সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দেন। আবার কেউ কেউ ২০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে গন্তব্যে যান।

rajsahi

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পরিবহন সংকটের এমন চিত্র। রাজশাহী থেকে আন্তজেলা রুটের যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী।

নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকা থেকে প্যাডেলচালিত রিকশায় দুই যাত্রী নিয়ে ফিরছিলেন বৃদ্ধ সেলিম হোসেন। চালকের কষ্ট হচ্ছে দেখে তাদের একজন একরকম জোর করেই চালকের আসনে বসেন।

নগরীর ফায়ার সার্ভিস মোড় আসতেই পুলিশের বাধায় পড়েন তারা। ওই দুই যুবককে নামিয়ে রিকশার চাকা পাংচার করে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বাধ্য হয়ে রিকশা ঠেলে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় পৌঁছেন চালক।

rajsahi

বৃদ্ধ রিকশাচালক সেলিম হোসেনের অভিযোগ, নগরীতে প্রার্থীদের ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। তারা ভোটারদের আনা-নেয়া করছেন। কিন্তু প্যাডেলচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে বিপদে পড়েন তিনি।

সেলিম হোসেনের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে পথেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি রিকশা পাঠিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা-নেয়া করছেন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন চালকরা। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলতে রাজি হননি প্রার্থীরা।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, ভোটের জন্য নগরীতে যান্ত্রিক যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু অযান্ত্রিক যান চলাচলে বাধা নেই। কোথাও বাধা দেয়ার খবরও আমাদের কাছে নেই। স্টিকার ছাড়া যান্ত্রিক যান চলাচলের সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।