গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

নড়াইলের দেশি গরুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশীয় পদ্ধতিতে জেলার চাষিরা গরু মোটাতাজা করায় এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। আর তাই প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার খামারি ও কৃষকেরা গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন।

গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার গরু বিভিন্ন জেলায় রফতানি করেছে জেলার খামরিরা। গেল বছর ভারত থেকে নড়াইলে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিল। তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার খামারি ও কৃষকেরা। তবে এ বছরও ভারতীয় গরু না আসলে বেশ লাভবান হবে এমনটাই আশা করছেন তারা।

জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্র জানায়, প্রতি বছর নড়াইলের কৃষকেরা ও খামারিরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে। গত বছর ৩০ হাজার গরু ও ছাগল মোটাতাজা করছে জেলার খামারি ও কৃষকেরা। যার মধ্যে প্রায় ২২ হাজার গরু ৮ হাজার ৩শ ছাগল। চলতি বছরে ৩১ হাজার পশু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। যার মধ্যে ২৩ হাজার ৪শ দেশি গরু আর ৭ হাজার ৬শ ছাগল। তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অন্তত ১ হাজার পশু বেশি মোটাতাজা করছে। গত বছর ভারত গরু আমদানি কম করায় স্থানীয় গরুর চাহিদা ছিল বেশি। তাই জেলার গরু খামারিরা ভালো লাভ করেছে। অনেক খামারি গতবছরের তুলনায় এবার আরও বেশি গরু মোটাতাজা করছে। অনেকে আবার নতুন খামার গড়ে তুলেছেন। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকেরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি দুটি করে গরু মোটাতাজা করছে। বর্তমানে জেলায় রেজিস্ট্রিকৃত গরুর খামার রয়েছে ৩৯৫টি। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটা গরু ৩৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন এখানকার চাষিরা।

Narail-Cow1

সরেজমিনে দেখা যায়, নড়াইল সদরের মির্জাপুর, চাকই, সিংগাশোলপুর, গোবরা, কমখালি, শাহবাদ, সিমানন্দপুর, জুড়লিয়া, লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, চাচই, কোলা, কুমড়ি, দিঘলিয়া, মল্লিকপুর, মাকড়াইল, লাহুড়িয়া, কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া, মহাজন, টোনা, খাশিয়াল, বাবরা, গ্রামের কৃষক ও খামারিরা অন্যন্য এলাকার তুলনায় পশু মোটাতাজা বেশি করছে।

জেলায় ৫৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৪৫ ভাগ করছে সাধারণ কৃষকেরা। এ ছাড়া কোরবানিকে সামনে রেখে প্রতিটা কৃষকের গোয়াল ঘরে তাদের হালের গরুর পাশাপাশি একটি দু’টি গরু মোটাতাজা করছে।

সদরের বিছালী গ্রামের কৃষক আকরাম জানান, সাধারণত কোরবানি ঈদের ৬-৭ মাস আগে দেশি প্রজাতির প্রতিটি বাছুর ১৫-২০ হাজার টাকায় ক্রয় করে পালন করতে থাকে। সারা বছর খাবার হিসেবে কাজের ফাঁকে বিল থেকে ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো হয় এবং ঈদের ২ মাস আগে খড়, খৈল, কুঁড়া, ও ভুসি খাওয়ানো হয়। বছরে যে খাবার লাগে অধিকাংশ খাবারই বিলের ঘাস। তাই খরচ কম। একটি বাছুর ১৫-২০ হাজার টাকায় ক্রয় করে ৬-৭ মাস পোষার পর ঈদের সময় আকার ভেদে ৪০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। আকার ভেদে ৩০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করে।

Narail-Cow1

নড়াইলের তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এ সকল হাটে নগদ টাকায় গরু বিক্রয় করেন। ১১টি হাটের মধ্যে জেলার মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া, শিয়েরবর, এবং পুরুলিয়া গরুরহাট চারটি সবচেয়ে বড়। এখানে বিভিন্ন জেলার বেপারিরা এসে গরু ক্রয় করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রয় করে। এ ছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে তা বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় করে। বর্তমানে এ জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এ পেশায় রয়েছে।

নড়াইল সদরের মির্জাপুর এলাকার কৃষক আমানউদ্দিন শেখ জানান, চার মাস আগে ৮২ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি এঁড়ে বাছুর কিনে লালন-পালন করছিলেন। গরুগুলো বড় হয়েছে। আশা করছি কোরবানির ঈদে ভালো দামে বিক্রয় করতে পারব।

নড়াইল জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মারফি হাসান জানান, বছর দশেক আগে নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করত। সেই সময় সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকেরা গরুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২-৩ বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় খামারি-চাষিদের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। তাই তারা লাভবান হয়েছে বেশ। তাই এ বছরও অনেক কৃষক গরু মোটাতাজা করতে আগ্রহী হয়েছে। আমরা সরকারিভাবে তাদেরকে ৪৫-৫০ ভাগ ওষুধ ফ্রি দিয়ে থাকি। এর মধ্যে কৃমির ওষুধ ও ভ্যাকসিন রয়েছে। কৃষক ও খামারিদের কয়েকবার করে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। সব সময় বিভিন্ন পরামর্শসহ খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।

হাফিজুল নিলু/আরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।