জনাকীর্ণ স্টেশনটি এখন প্রাণহীন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০১:৪৬ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৮

গাজীপুরের শ্রীপুরে জনবল সঙ্কটের অজুহাতে সবচেয়ে পুরনো সাতখামাইর রেলস্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ৭ জুলাই সাতখামাইর রেলেস্টেশনের মাস্টারকে একই উপজেলার রাজেন্দ্রপুরে বদলি করা হলে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হঠাৎ করেই জনাকীর্ণ স্টেশন এলাকাটি এখন প্রাণহীন স্টেশনের পরিণত হয়েছে।

এদিকে স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাতখামাইর থেকে যাতায়ারকারী যাত্রীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেশনটি পুনরায় চালুর জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, ১৯ শতকের চল্লিশের দশকে, তদানীন্তন ব্রিটিশ শাসকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলসড়ক নির্মাণ করেন। এই সড়কের শ্রীপুর রেল স্টেশন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে সাতখামাইর বাজার সংলগ্ন স্থানে ওই স্টেশন চালু করা হয়।
বর্তমানে স্টেশনটি পরিচালনা করার জন্য তিনজন স্টেশন মাস্টার থাকার নিয়ম থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ একজন স্থায়ী ও একজন চুক্তি ভিক্তিক স্টেশন মাস্টার দ্বারা কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো।

সর্বশেষ চুক্তি ভিক্তিক স্টেশন মাস্টারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দায়িত্বভার পড়ে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ফরিদ মিয়ার ওপর, কিন্তু একজনের পক্ষে একটি স্টেশন চালানো সম্ভব না হওয়ায় সাতখামাইর স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে তাকে রাজেন্দ্রপুরে বদলি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই ওই স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়াও তিনজন পোর্টার ম্যানের মধ্যে আলাল উদ্দিন ছাড়া বাকি আনোয়ার হোসেনকে ময়মনসিংহ ও আফাজ উদ্দিনকে ঘোড়াশাল বদলি করা হয়। যদিও গত দুই বছর আগে অন্যান্য স্টেশনের ন্যায় সাতখামাইর রেল স্টেশনটিতেও কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এখন স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ করার ফলে মূল্যবান যন্ত্রপাতিও তালাবদ্ধ হয়ে রয়েছে।

সরেজমিনে ওই রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ের লোকারণ্য এই স্টেশনে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে পয়েন্ট ম্যান আলাউদ্দিন জানান, এক সপ্তাহ হলো মাস্টারের অভাবে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

সাতখামাইর রেলস্টেশন থেকে রাজেন্দ্রপুরে বদলি হওয়া স্টেশন মাস্টার ফরিদ মিয়া জানান, এই স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন আপ-ডাউনে বলাকা এক্সপ্রেস ও ভাওয়াল এক্সপ্রেস এখানে যাত্রা বিরতি করত, এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন শতাধিক যাত্রী ট্রেনে ওঠানামা করতেন। টিকিট বিক্রি থেকেও ভালো আয় হতো। যাত্রীদের দুর্ভোগ সত্ত্বেও স্টেশন মাস্টারের অভাবেই মূলত স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী রুহুল আমিন জানান, প্রতিতিন তিনিসহ আরও অনেকেই এই স্টেশন থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ যাতায়াত করতেন এবং সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতেন। এখন স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি স্টেশনটি চালুর দাবি জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, গত ৬ জুলাই একসঙ্গে চুক্তিভিক্তিক ১২ জন স্টেশন মাস্টারের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রাজেন্দ্রপুর ও সাতখামাইর স্টেশনের দু’জন মাস্টারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় স্টেশন দুটিতে একজন করে মাস্টার দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। তাই সাতখামাইর স্টেশন বন্ধ করে ওই স্টেশন মাস্টারকে রাজেন্দ্রপুর পদায়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চুক্তি ভিক্তিক মাস্টারদের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। আশা করছি আগামী দেড়-দু’মাসের মধ্যে স্টেশনটি চালু করা যাবে।

এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।