বিএমডিসির তদন্তে সাড়া দেননি অভিযুক্ত চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:৪৬ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৮
চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু রাইফা খানের মৃত্যু হয়

চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ঢাকা থেকে আসা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তদন্ত কমিটির আহ্বানে সাড়া দেননি অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক।

মঙ্গলবার ( ২৪ জুলাই) সকালে বিএমডিসির তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর রুহুল আমিনের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত দল অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা হাসপাতালটিতে প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান করেন।

অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্রদেব।

দুপুরে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর রুহুল আমিন জানান, তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের ম্যাক্স হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হলেও তারা উপস্থিত হননি।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিশু কন্যা রাইফার পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব।’

Ctg-Bmdc-News1

চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন বিএমডিসির তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান

গত ২৯ মে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ২ বছর ৪ মাস বয়সী শিশু রাইফা। চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যু হওয়ার অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হলে ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এর আগে ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আজিুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। অভিযুক্ত তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ চার দফা সুপারিশ করে এ কমিটি।

এদিকে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক বিবৃতিতে শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) গঠিত তদন্ত কমিটিকে বির্তকের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার আহ্নবা জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।

সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক ও বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য রুবেল খানের আড়াই বছরের শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের অদক্ষতা, অবহেলাকে দায়ী করেছেন।

একইভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রুটি চিহ্নিত করে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ী চিকিৎসক এবং অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ধারাবাহিক আন্দোলন করছে।

Ctg-Bmdc-News1

চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শনে বিএমডিসির তদন্ত কমিটি

এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিএমডিসি অধ্যাপক মো. রুহুল আমিনকে চেয়ারম্যান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে যেখানে সাংবাদিকদের অভিযোগ রয়েছে সেখানে অভিযোগকারী রাইফার পরিবার এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকদের একসঙ্গে ডেকে বক্তব্য গ্রহণ কখনই কাম্য হতে পারে না।

এ ছাড়া ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফার পরিবারের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত রয়েছে। কিন্তু এরপরও তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ রাইফার পরিবারের সদস্যদের ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এতে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকরা তদন্ত কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) বিএমডিসির গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করছে। সিইউজে মনে করে, তদন্ত কমিটির সদস্যরা সব বির্তকের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। নিজেদের পেশার প্রতি মোহগ্রস্ত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ ক্ষেত্রে সিইউজে ও রাইফার পরিবার তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।