দুই হাত হারানো সিয়াম পেলেন জিপিএ-৪
কাটা দুই হাত নিয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৪.০৮ পেয়েছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মশুরা গ্রামের ফারুক আহম্মেদ খানের ছেলে সিয়াম আহম্মেদ খান।
নড়িয়া সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ ফলাফল অর্জন করেন সিয়াম। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিতে সাহায্য করেছেন অন্য শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার পথে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হন সিয়াম আহম্মেদ খান (১৮)।
অসুস্থ সিয়ামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে সংক্রমণ দেখা দেয়ায় অস্ত্রোপচার করে কবজির ওপর থেকে দুই হাত কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এতে দমে যাননি সিয়াম। প্রতিবন্ধকতা জয় করে নড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.০৮ পান সিয়াম।
অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না থেকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য পড়ালেখা শুরু করেন সিয়াম। বড় হয়ে ইউএনও হতে চান তিনি। দাঁড়াতে চান প্রতিবন্ধীদের পাশে।
সিয়াম আহম্মেদ খানের মা নাজমা বেগম বলেন, হাত অকেজো হওয়ার কারণে আমার ছেলের অনেক কষ্ট হয়। তবুও লেখাপড়া করে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার ছেলে যাতে সমাজে অবহেলিত না হয় সেজন্য যতদূর পারব তাকে লেখাপড়া করাব।
বাবা ফারুক আহম্মেদ খান বলেন, আমি গরিব মানুষ। তবুও ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসা করাতে এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখন পথে বসেছি, আর পারছি না। এত কষ্টের পরও ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে যাচ্ছি। ছেলে পাস করেছে আমি খুব আনন্দিত। ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।
অভিযোগ করে সিয়ামের বাবা আরও বলেন, হাইকোর্ট থেকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে ৫০ লাখ টাকা দিতে বললেও এখনও কোনো টাকা দেয়নি তারা।
নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেক বলেন, সিয়াম মেধাবী ছাত্র। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে সে। তার ইচ্ছাশক্তি প্রবল, তাই ভালো ফলাফল করেছে। সিয়াম আমাদের কলেজের গর্ব।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে দুই হাত হারানো সিয়াম জিপিএ-৪.০৮ পেয়েছে। সিয়াম পাস করেছে শুনে খুব খুশি হয়েছি। খুশির খবর শুনে ওর বাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়েছি। সিয়ামের সামনে কলেজের ভর্তিসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
মো. ছগির হোসেন/এএম/পিআর