রাজশাহীতে কলম বিরতির ডাক দলিল লেখকদের
রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ড রুমের ভলিউম এবং ইনডেক্স জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোতে স্থানান্তরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী সদর লেখক সমিতির সদস্যরা। বুধবার বিকেলে সদর দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জেলা রেজিস্ট্রার মীর মাহাবুব মেহেদীর এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন এবং কলম বিরতির ডাক দিয়েছেন দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ। জেলা রেজিস্ট্রারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে আরো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মহিদুল হক। তিনি জানান, ১৮৬৫ সাল থেকে রাজশাহী রেকর্ড রুমে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জমির ভলিউম, ইনডেক্স ও নথি সংরক্ষণ করা আছে। সম্প্রতি জেলা রেজিস্ট্রার মীর মাহাবুব মেহেদী এসব নথি ও ভলিউমগুলো রাজশাহী থেকে জেলা ও উপজেলা অফিসে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এ উদ্যোগের সঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারি সম্পৃক্ত রয়েছেন। এর ফলে এসব ভলিয়ম ও নথি অরক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরানো ভলিউমগুলোর পাতা ছিঁড়ে বা পরিবর্তন করে জমি জালিয়াতি চক্র বিশেষ সুবিধা হাসিলের অপচেষ্টা করছে। এর ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দলিল লেখকরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৫০ বছর রাজশাহীতে যত্নের সঙ্গে রেকর্ড ভলিউমগুলো সংরক্ষিত আছে। রাজশাহীর রেকর্ড রুমের মতো অন্য জেলা বা উপজেলাগুলোর ভূমি অফিসের রেকর্ড রুম রক্ষিত নয়। কারণ, রাজশাহীর রেকর্ড রুম জেলার সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কার্যালয় এলাকায়। একারণে এখানে রেকর্ড রুমটি সবচেয়ে বেশি রক্ষিত। এগুলো যদি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ভলিউমগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৬৯ সালে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ড রুম পুড়িয়ে দেয় জালিয়াতি চক্র। এছাড়াও নওগাঁ জেলা সদর এবং জেলার পত্নীতলা ভূমি অফিসেও সমসাময়িক সময়ে আগুন লেগে পুড়ে যায়। ২০১৫ সালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এসব অরক্ষিত জায়গায় মূল্যবান ভলিউমগুলো পাঠানোর উদ্যোগ চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই না বলে অভিযোগ করেন দলিল লেখকরা। এর ফলে জমি জালিয়াতি চক্রকে উৎসাহিত করছেন জেলা রেজিস্ট্রার এবং তাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, ভলিউম স্থানান্তরের ঘটনায় বুধবার বিকেল ৪টায় সংগঠনের সভাপতি মহিদুলের হকের নেতৃত্বে দলিল লেখক সমিতির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল জেলা রেজিস্ট্রার মীর মাহাবুব মেহেদীর সঙ্গে দেখা করেন। এসময় দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ ভলিউম স্থানান্তরের প্রতিবাদ জানান। তারা রাজশাহীতেই ভলিউমগুলো সংরক্ষণের দাবি জানান।
দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, এসময় জেলা রেজিস্ট্রার তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ভলিউম স্থানান্তরের জন্য উচ্চপর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা থাকলে তা দেখতে চান নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এসময় তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান জেলা রেজিস্ট্রার।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মহিদুল হক বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার ভলিয়মের সার্টিফাইড কপি দিতে তার অধস্তনদের নিষেধ করেছেন। সার্টিফাইড কপির সঙ্গে দলিল লেখকদের জীবন ও জীবিকা সম্পৃক্ত। এর ফলে তার সংগঠনের সদস্যরা সমস্যার মধ্যে পড়বেন। তারা তাদের আয় থেকে বঞ্চিত হবেন। অবিলম্বে তিনি জেলা রেজিস্ট্রারকে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, জেলা রেজিস্ট্রারের ভলিউম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আদালত চত্বরে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া কাল সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কলম বিরতি চলবে দলিল লেখকদের বলে জানিয়েছেন তিনি। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার মীর মাহাবুব মেহেদী বলেন, নিবন্ধন পরিদফতরের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে ভলিউম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি খয়ের উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ জাকাউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল্লাহ পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিয়ার রহমান, আইন সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক শামসুজ্জামান বাবলু প্রমুখ।
শাহরিয়ার অনতু/বিএ