নিয়ম-নীতির বালাই নেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ১০:২৩ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৮

ছালেহ আহম্মেদ (৫২)। গত ৫ বছর যাবৎ ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার কুঠিরহাটে ছোট একটি মুদি দোকানে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করে আসছেন। তার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আশপাশের অন্তত দুই শতাধিক দোকানি ও পরিবার রান্নার কাজ চালান। কিন্তু এ ব্যবসা করতে যে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয় এটা তিনি কখনও শোনেননি।

শুধু ছালেহ আহম্মদই নন। ফেনী জেলা জুড়ে অন্তত সহস্রাধিক দোকানপাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার। বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিদর্শকের লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না।

সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সোহেল রানা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক করলেও কারও যেন এতে ভ্রুক্ষেপ নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফেনীর শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, একাডেমি সড়ক, ট্রাংক রোডসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে, মার্কেটের সামনে, হার্ডওয়্যার দোকানে, সড়কের উপর, দোকানের সামনে এমনকি খোলা আকাশের নিচে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু শহর নয়; গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট-খাটো দোকানঘরেও চলছে এর জমজমাট বাণিজ্য। গ্রামের চা-দোকান, মুদি দোকান, মনোহরী দোকান, ফার্মেসি, স্টেশনারী দোকান এমনকি মোবাইল রিচার্জের দোকানগুলোতেও চলছে এ দাহ্য পদার্থের ব্যবসা।

সিলিন্ডার ব্যবসার বিষয়টি ক্রেতাদের কাছে জানান দিতে দোকানের সামনে খোলা আকাশের নিচে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রেখে প্রদর্শনী করেন দোকানিরা।

প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়কে উম্মুক্ত স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে বিক্রি-মজুদ ও লোড-আনলোডের কাজ এখন নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্য। এতে করে যেকোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যের লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান থাকলেও ব্যবসায়ীরা এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। অনেকেই জানেন না এ ধরনের ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়ীদেরকে কী ধরনের বিধি মানতে হবে।

নিয়ম মোতাবেক একটি সিলিন্ডার ৫ বছরের অধিক সময় ব্যবহার না করতে বলা হলেও ফেনীর হাট-বাজারে ১০ থেকে ১৫ বছর আগের সিলিন্ডারও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী পরিত্যাক্ত সিলিন্ডার মেরামত ও রং করে নতুন ভাবে বাজারজাত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন মানুষ।

ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া বাজারের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, লাইসেন্স করতে গেলে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা তৈরি করেন কর্মকর্তারা। এটা নেই, সেটা নেই বলে হয়রানি করেন। এরপর নকশা তৈরির জন্য খরচ করতে হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এসব কারণে বাধ্য হয়ে লাইসেন্স না করেই ব্যবসা করি।

ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টাফ অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজ বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে এটি বিক্রি করতে হয়। কিছু প্রাইভেট কোম্পানি কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী সিলিন্ডার বাজারজাত করে আসছে। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই এর বিক্রয়-সংরক্ষণ ও ব্যবহারকারীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, সরকার গ্যাসের অপচয় রোধে সিলিন্ডার ব্যবহারে নানাভাবে দেশবাসীকে উৎসাহ দিচ্ছেন। মূলত যারা এর ব্যবসা ও ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।