রাজিয়ার স্যালাইন বনাম কলম


প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০১৫

এক হাতে চলছে জীবন বাঁচানোর স্যালাইন।  অন্য হাতে শুরু করেছেন জীবন গড়ার সংগ্রাম।  থেমে নেই সদ্য প্রসূতি মা রাজিয়া পারভীন।  অসুস্থাবস্থায় অংশ নিয়েছেন পরীক্ষায়।  মেধাবী এই মা পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় এক ক্লিনিকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেন।

পরিবারিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পঞ্চগড় শহরের জালাসীপাড়া মহল্লার মোহাম্মদ আল আরিফের স্ত্রী রাজিয়া পারভীন স্থানীয় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের ২০০৯-২০১০ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।  তিনি মঙ্গলবার বিকেলে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে প্রথম পুত্র সন্তানের মা হন।  বুধবার সকালে ছিল তার সম্মান বাংলা বিভাগের শেষ বর্ষের পরীক্ষা।  তাই নবজাতককে কোলে রেখে রাত জেগে প্রস্তুতি শেষ করেছেন রাজিয়া পারভীন।  স্বামী আরিফ নির্ঘুম দাঁড়িয়েছিলেন মেধাবী স্ত্রীর পাশে।  তবে পরিবারের কেউ কেউ এমন অসুস্থ অবস্থায় তাকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন। কিন্তু প্রসব বেদনা এবং শারিরীক দুর্বলতা আটকাতে পারেনি এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে।

বুধবার সকালে তিনি নবজাতককে বোনের কাছে রেখে অ্যাম্বুলেন্সে করে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ পরীক্ষার কেন্দ্রে যান এবং অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন জানান।  কেন্দ্র প্রধান ও কলেজের অধ্যক্ষ কানাই লাল কুন্ডু তাকে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন।  গর্ভের সন্তান নিয়েই তিনি আগের অন্যসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।  জীবন গড়ার স্বপ্নে বিভোর আদম্য মেধাবী রাজিয়া পারভীনের এই প্রচেষ্টা সহপাঠিদের অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে মনে করেন তার শিক্ষকসহ অন্য পরীক্ষার্থীরা।

সদ্য প্রসূতি মা রাজিয়া পারভীন জানান, পেটে সন্তান নিয়ে সম্মান শেষ বর্ষের সব পরীক্ষাই দিয়েছি।  এই একটি পরীক্ষা বাকি ছিল।  আগের দিন মা হয়েছি।  মা হওয়ার আনন্দ আমার শারীরিক কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।  তাই কষ্ট করে হলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি এবং পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে।

রাজিয়া পারভীনের সহপাঠী রাবেয়া খাতুন জানান, রাজিয়া বরাবরই ভালো ছাত্রী।  সে পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো করবে।

রাজিয়ার স্বামী মোহাম্মদ আল আরিফ বলেন, স্ত্রীর এমন জীবন সংগ্রামে আমি গর্বিত।  সে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা দেওয়ার কথা জানালে আমি কেন্দ্র প্রধানের সাথে যোগাযোগ করি।  তাদের সহযোগিতায় আমার স্ত্রী পরীক্ষা দিতে পেরেছে।

পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কালেজের বাংলা বিভাগীয় প্রধান মো. এহতেশামুল হক বলেন, বাংলা বিভাগের মধ্যে সে খুব ভালো।  নিয়মিত কলেজে উপস্থিত থেকে ক্লাস করতো।  আমি তার উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করছি।

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র প্রধান কানাই লাল কুন্ড বলেন, রাজিয়া পারভীনের মানসিক শক্তি দেখে আমরা অভিভূত।  তাই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।