মসজিদের দানবাক্সে ৮৯ দিনে ৮৯ লাখ টাকা
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় গণনা শেষে এ টাকার হিসাব পাওয়া যায়। টাকা ছাড়াও দানবাক্সে অনেক স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।
হিসাব অনুযায়ী দানবাক্সে দৈনিক কমপক্ষে ১ লাখ টাকা করে জমা হয়েছে। গত মে মাসে ওই দানবাক্সগুলোতে চুরির ঘটনা না ঘটলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যেত বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দান বাক্সগুলো খোলা হয়। পরে শুরু হয় টাকা গণনার পালা।
এই মসজিদের দানবাক্স থেকে বছরে পাওয়া যায় প্রায় ৪ কোটি টাকা। মসজিদে রয়েছে লোহার তৈরি বড় ৬টি দানবাক্স। প্রতি তিন মাস পর পর এগুলো খোলা হয়।
তিন মাস পর শনিবার সকালে খোলা হয় মসজিদের ৬টি লোহার দানবাক্স। টাকাগুলো বস্তায় ভরে নেয়া হয় মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নামাজের ঘরে। সেখানে সকাল ৯টায় শুরু টাকা গণনা। সিসি ক্যামেরার নিচে জেলা প্রশাসনের ১০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিভিন্ন ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা, শতাধিক মাদরাসা ছাত্রসহ প্রায় দুইশ মানুষ একটানা টাকা গণনায় অংশ নেন। টাকা গণনা শেষ হয় বিকেলে সাড়ে ৪টায়।
কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসাইনসহ ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া কাঞ্চন, জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি সাংবাদিক সাংফুল হক মোল্লা দুলু, ক্যাবের সভাপতি সাংবাদিক আলম সারোয়ার টিটু ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদ বলেন, তিন মাস পর পর মসজিদের ৬টি বড় লোহার দানবাক্স খোলা হয়। গণনা শেষে এসব দানবাক্সে এবার ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া আড়াইশ গ্রাম স্বর্ণের গহনাসহ বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। টাকা গণনা করতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা। গণনা শেষে টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকের মসজিদ শাখায় জমা রাখা হয়। গত মে মাসে চুরির ঘটনা না ঘটলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যেত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের গাইটাল এলাকার নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই মসজিদের দানবাক্স খুলে প্রতিবারই কোটি টাকার ওপরে পাওয়া যায়। প্রতিদিন জেলার বাসিন্দারা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ মসজিদের দানবাক্সগুলোয় অর্থ ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।
সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়। তখন ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও অনেক স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। এর মধ্যে গত মে মাসে মসজিদের দানবাক্স চুরির ঘটনা ঘটে।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি বাক্সগুলো খুলে ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া যায়। যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২৬ আগস্ট মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
নূর মোহাম্মদ/এএম/আরআইপি