জুতার ব্রাশে ভাগ্য বদল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ১১:২৬ এএম, ০৫ জুলাই ২০১৮

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের হেরেন্দ্রপাড়া গ্রামের প্রায় আড়াইশ পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে জুতার ব্রাশ শিল্প। অল্প পুঁজিতে কারখানা তৈরির পাশাপাশি বেশ লাভজনক হওয়ায় সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে এই শিল্প। এর ফলে উপজেলার এ গ্রামটিতে ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জুতা পরিষ্কারের ব্রাশ কারখানা।
কারখানাগুলো অসংখ্য পরিবারের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বেকারত্ব দূরিকরণে রেখেছে যথেষ্ট ভূমিকা।

ব্রাশ শিল্পে সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের হেরেন্দ্রপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট বড় ৫টি জুতার ব্রাশ কারখানা। এতে কাজ করছেন প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক। একেকটি কারখানাতে দিনে তৈরি হচ্ছে প্রায় তিন শতাধিক ব্রাশ। এসব ব্রাশ তৈরিতে উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় চুল, গরুর বাইট, কাঠ, জিয়াই তার ও বার্নিশ। ১৪৪টি ব্রাশ নিয়ে হয় এক ক্রোশ। আর এই এক ক্রোশ ব্রাশের দাম ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা। এ ধরনের কারখানায় তৈরি প্রতিটি ব্রাশে লাভ হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ টাকা।

সরেজমিনে জানা যায়, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরতো আর অভাব অনটন ছিল যাদের নিত্যসঙ্গী সেইসব পরিবারের মুখে আহার আর হাসি ফুটিয়েছে এই ব্রাশ কারখানা। এখন উপজেলার হেরেন্দ্রপাড়া গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি ব্রাশ তৈরির কারখানা। ওই কারখানাগুলোতে কাজ করছেন অসংখ্য শ্রমিক।

ব্রাশ শ্রমিক ইব্রাহিম, সবুজ ও উজালা বেগম জানান, আগের চেয়ে ভালোই চলছে তাদের জীবন। ক্রোশ অনুপাতে টাকা পেয়ে থাকেন তারা। মনযোগ সহকারে কাজ করলে দিনে তারা ৫শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

ব্রাশ কারখানার মালিক আব্দুল মান্নান জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে চলে যান ঢাকায়। চাকরি পান ব্রাশ তৈরির কারখানায়। দীর্ঘ ১৫ বছর কাজ করেন ওই ব্রাশ কারখানায়। ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন নিজেই কারখানা তৈরি করবেন। যদিও শহরমুখী ব্যবসা তৈরি করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যা তার ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত বদলে গ্রামে ফিরে শুরু করেন ব্রাশ তৈরির কারখানা। এখন তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী নন বরং পাল্টে দিয়েছেন পুরো গ্রামের

তিনি জানান, স্থানীয় কাঁচামাল, কদম কাঠ ও ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারি থেকে গরুর লেজের চুল সংগ্রহ করে তার কারখানায় নির্ধারিত প্যাটার্নে বার্নিশিং ফিনিশিংসহ কয়েকটি ধাপে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ডিজাইনের ব্রাশ।

jagonews24

আব্দুল মান্নান আরও জানান, অর্থের অভাবে তার কারখানায় তৈরি ব্রাশ সরাসরি বাজারজাত করতে পারছেন না তিনি। তার তৈরি পণ্যগুলো নামমাত্র মূল্যে গুলিস্থান, চকবাজারের বিভিন্ন ব্রাশ তৈরির কারখানায় বিক্রি হচ্ছে। যার উপর পরে নিজস্ব লোগো লাগিয়ে সারা দেশে বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

অপর এক কারখানার মালিক রোকন মোল্লা বলেন, সরকার চায়না থেকে এ ধরনের পণ্য কিনছে। এছাড়াও পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিপিসহ বিভিন্ন দফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বুট জুতো পালিশ করার কাজে ব্রাশ ক্রয় করা হচ্ছে। সরকার যদি সরাসরি এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই ব্রাশগুলো ক্রয় করতো তাহলে এ কারখানা সংশ্লিষ্টরা অনেক উপকৃত হতো।

আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।