নোয়াখালীতে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি
‘বদলে যাব, বদলে দিব’। ‘এসো সবাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’। ‘ যে মুখে মা, সে মুখে মাদক না’। এ সব স্লোগানকে সামনে রেখে মাদকের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সচেতন করার লক্ষ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শুরু হয়েছে এক ব্যতিক্রমী সচেতনমূলক কর্মসূচি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ আয়োজন। উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলে মোট ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে মাসব্যাপী সচেতনমুলক কর্মসূচি ‘শপথ বাক্য পাঠ’ চলবে। আর এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃর্স্ফুতভাবে অংশগ্রহণ করছে। উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক, অভিবাবকসহ সচেতন নাগরিক সমাজ।
প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিয়মিত অ্যাসেম্বলি, জাতীয় সংগীত পরিবেশন করার পর এ শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। আর বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন নিজে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের এ শপথ বাক্য পাঠ করান। এ সময় তার সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিববাকরাও উপস্থিত থাকেন।
সরজেমিনে উপজেলার ছয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, পুরো বিদ্যালয় মাঠ ও তার আশপাশ মাদকবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন লাগানো। বিদ্যালয়ের প্রায় ২২০০ শিক্ষার্থী নিয়মিত অ্যাসেম্বলি করার জন্য মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংগীত পরিবেশনরে পর শিক্ষার্থীরা হাত তুলে মাদকের বিরুদ্ধে শপথ বাক্য পাঠ করেন। শপথ বাক্যটি পাঠ করান বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন।
এ ব্যতিক্রম উদ্যোগের স্বপ্নদ্রষ্টা বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, একেবারেই নিজ দায়বদ্ধতা থেকে তিনি এ কাজটি শুরু করেছেন। তার মনের ইচ্ছা ছিল কখনও সুযোগ পেলে তিনি এই কাজটি শুরু করবেন। বেগমগঞ্জে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মাদকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন মাদকাসক্ত সন্তান বাবা বিরুদ্ধে মাকে সাক্ষী করছেন এবং চাচা তার পক্ষে কথা বলছেন। এ রকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে এ সমাজে। ২০৪১ সালে যারা রাষ্ট্রের কর্ণধার হবে, রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে। তাদের মধ্যে ইচ্ছা শক্তি বোপন করে দেয়ার কারণে তিনি এ কাজটি শুরু করেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন সারা দেশে মাধ্যমিক লেভেলে উঠতি এই শিক্ষার্থীরা। যারা বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৌতুলবশত ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করছে বা গ্যাংস্টার হয়ে উঠছে। তাদেরকে নিবারণ করার জন্য এই সমাজিক আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।
ছয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকক মো. আলমগীর জানান, এ ধরনের উদ্যোগ আরও আগে নেয়ার প্রয়োজন ছিল। বিলম্বে হলেও এর প্রভাব শিক্ষার্থীসহ পুরো সমাজে পড়বে।
স্থানীয় সচেতন অভিভাবকরাও এ কর্মসূচির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
মাদক দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আর তাই মাদকের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও নতুন নতুন কর্মসূচি সরকারের পক্ষ থেকে নেয়ারও দাবি তাদের।
মিজানুর রহমান/আরএ/পিআর