শিশু রাকিব হত্যাকাণ্ড : গ্রেফতার ৪
মধ্যযুগীয় নির্যাতনে নিহত শিশু রাকিব হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন খুলনাবাসী। এছাড়া রাকিবকে নির্যাতনকারী গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শরীফের মা বিউটি বেগমকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে মঙ্গলবার সকালে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মিজান নামের এক স্থানীয় দোকানিকেও আটক করেছে পুলিশ।
রাকিব হত্যাকাণ্ডে খুলনাবাসী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে এ হত্যকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি, খুলনা সদর আসনের সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঘটনাস্থল এবং নিহতের বাড়িতে যান। এই ঘটনায় কেএমপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এলাকাবাসী মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে নগরীর ব্যস্ততম খানজাহান আলী রোড ও সেন্ট্রাল রোডে দফায় দফায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এসময় এ দুই সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী সেন্ট্রাল রোড অবরোধ করে প্রতিবাদ চালিয়ে যান।
রাকিব হত্যায় অভিযুক্ত নগরীর টুটপাড়ার শরীফ মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুর ফাঁসি দাবি করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিশু রাকিবের একমাত্র বোন রিমি (৮) ও খালা পারুল বেগমসহ সর্বস্তরের নারী, পুরুষ ও শিশুরা অংশ নেন।
এদিকে সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি নির্যাতনে নিহত রাকিবের বাড়িতে এসে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে বলেন, এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে কেএমপির এডিশনাল কমিশনার মাহবুব হাকিমকে।
সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা আশিকুজ্জামান লনি জাগো নিউজকে বলেন, রাকিব খুব নরম স্বভাবের ছেলে। আড়াই মাস আগে সে শরীফের গ্যারেজ থেকে কাজ ছেড়ে বাড়ির পাশে পিটিআই মোড়ে নাসিরের গ্যারেজে কাজ নেয়। গত সোমবার তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি জানান।
খুলনার সাবেক সাংসদ এবং খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জাগো নিউজকে জানান, রাকিব হত্যার বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনের পর রাকিবসহ আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন জনগণের মধ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে তিনি নিহতের পরিবারের ক্ষতি পূরণ দাবি করেন।
উল্লেখ্য, পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু সামিউল আলম রাজনের অকাল মৃত্যুর ক্ষত শুকাতে না শুকাতে সোমবার খুলনায় নিষ্ঠুর নির্যাতনে প্রাণ গেল ১২ বছরের শিশু রাকিবের। এক কর্মস্থান ছেড়ে অন্য স্থানে যোগ দেওয়ার কারণে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে।
মধ্যযুগীয় কায়দায় রাকিবের মলদ্বারে কমপ্রেসার মেশিন বসিয়ে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে নির্যাতন করে তাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নগরীর টুটপাড়ার শরীফ মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুর বিরুদ্ধে। রাকিব টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের দিনমজুর আলম হাওলাদারের ছেলে।
সোমবার বিকেলে পৈশাচিক নির্যাতনের পর রাত ১২টার দিকে মৃত্যু হয় শিশু শ্রমিক রাকিবের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাকিবের শরীরে অস্বাভাবিক পরিমাণে বাতাস প্রবেশ করানোর কারণে তার নাড়িভুড়ি ছিঁড়ে যায় এবং ফুসফুস ফেটে যায়। এসব ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অর্গান অকেজো হয়ে যাওয়ায় তাকে আর বাঁচানো যায়নি বলে জানান খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
খুলনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, রাকিবকে নির্যাতনকারী গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শরীফের মা বিউটি বেগমকেও গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার সকালে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মিজান নামের এক স্থানীয় দোকানিকেও আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আলমগীর হান্নান/এমজেড/এমএস