মোংলা বন্দর উন্নয়নে ৬ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে ভারত
মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ৬ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে ভারত সরকার। চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে ভারতের এই ঋণ সহায়তায় দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় শুরু হবে উন্নয়নের একগুচ্ছ মহাকর্মযজ্ঞ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দেশটি তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশের জন্য যে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি করে, সেখান থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়নে দেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা (চিফ প্লানিং অফিসার) মো. জহিরুল হক বলেন, ভারতের দেয়া ঋণের টাকার আলোচ্য একগুচ্ছ প্রকল্পের মধ্যে থাকছে, মোংলা বন্দর জেটিতে ১ ও ২নং কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড নির্মাণ, কন্টেইনার ডেলিভেরি ইয়ার্ড নির্মাণ, ইয়ার্ড শেড নির্মাণ, নিরাপত্তা দেয়াল অটোমেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ, সার্ভিস ভেসেল জেটি শেড ও অফিস নির্মাণ, বন্দর প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ, এমপিএ টাওয়ার, পোর্ট রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স কমিউনিটি সুবিধাদি নির্মাণ, ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ড, ইকুইপমেন্ট শেড ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ এমটি পুল নির্মাণ, সিগনাল রেড ক্রসিং ও ওভারপাস নির্মাণ, বিনোদন ব্যবস্থাসহ বাঁধ নির্মাণ এবং ৫টি হারবার ক্রাফট ক্রয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর একেএম ফারুক হাসান জানান, বিগত সরকারের আমলে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনায় মোংলা বন্দর শুধু সচলই হয়নি বন্দরটি এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে কম দূরত্বের এই বন্দরের উপর আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চাপ বহুগুণ বেড়ে যাবে।
বর্তমানে মোংলা বন্দরে যে অবকাঠামো সুবিধা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এই বাস্তবতাসহ দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়নে ভারতের কাছ থেকে ৬ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার ঋণ সহায়তায় সরকার একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের আধুনিক সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে এ বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে সরকারকে। এছাড়া বর্তমানে মোংলা বন্দরের নিজস্ব জমিতে ১১টি এলপিজি কারখানা, ৫টি সিমেন্ট কারখানাসহ আরও ১০টি শিল্পকারখানা রয়েছে। বন্দর এলাকায় এপিজেডসহ ২৫৮ একর জমিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেপজা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব শিল্প কারখানার কাঁচামাল মোংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে আসছে। ফলে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
মোংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, মোংলা বন্দরকে ঘিরে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা রয়েছে। পদ্মাসেতু থেকে মোংলা পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন, মোংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ, স্পেশাল ইকোনমি জোন স্থাপন, রূপসা নদী ও মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বিগত জোট সরকার এ বন্দরকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো উন্নয়ন করেনি। দুর্নীতি করে এ বন্দরকে শেষ করে দিয়েছিল। ওই সময় বন্দরে কোনো জাহাজ আসেনি। মৃত বন্দরে পরিণত হয়েছিল। সেখান থেকে বর্তমান সরকার এ বন্দরকে টেনে তুলেছে। বন্দর ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৫০টি জাহাজ এখন মোংলা বন্দরে আসছে। এ বন্দর ব্যবহারে বিদেশিদের আগ্রহ এখন অনেক বাড়ছে। ভারতীয় ৬ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার ঋণ সহায়তায় একগুচ্ছ উন্নয়নে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
শওকত আলী বাবু/এমএএস/পিআর