দেখতে হুবহু বিজিবি সদস্যের মতো
গায়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর পোশাক। মাথায় বিজিবির ক্যাপ। হাতে ডায়েরি। বুকে ঝুলানো বিজিবির পরিচয়পত্র। চুলও সৈনিকদের মতো কাটানো। দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই তারা একটি প্রতারক চক্র। চক্রটি এই বেশে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাকিতে মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে।
চলতি মাসের ১২ ও ১৩ জুন এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। চক্রটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।
এদিন শহরের ঠাকুরগাঁও ইলেকট্রনিক্স, মেসার্স মুকিদ হার্ডওয়্যার, মেসার্স আরিফ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স নিউ স্টিল অ্যান্ড নিউ ফার্নিচারের দোকান থেকে বিজিবির পোশাক পরিহিত মো. মোবারক হোসেন (পদবি নায়েক, ব্যক্তিগত নম্বর ৩১০২২, পরিচয়পত্র নং ৪৯৭২০১৪) ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে ব্যাটালিয়ন থেকে টাকা পরিশোধের কথা বলে।
এসব দোকানের মালিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জুন মঙ্গলবার বিজিবির পোশাক পরিহিত মো. মোবারক হোসেন নামে এক ব্যক্তি সব দোকান ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও অন্য মালামালের দাম লিখে নিচ্ছিলেন (বিজিবির নিয়ম অনুযায়ী তারা একদিন আগে বাজারে এসে বিভিন্ন দোকান থেকে মালের দাম দেখে যায় এবং পরের দিন মাল নিয়ে যায়)।
ঠিক তেমনি বিজিবির ওই সদস্য সব দোকান থেকে মালের মূল্য দেখে গিয়ে পরের দিন ১৩ জুন ঠাকুরগাঁও ইলেকট্রনিক্স থেকে ৯৪ হাজার ৬শ’ টাকার বিভিন্ন মালামাল, মুকিদ হার্ডওয়্যার থেকে ৪৩ হাজার ৭৬০ টাকার মালামালসহ কয়েকটি দোকান থেকে মাল নেয় এবং সন্ধ্যায় ৫০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের টাকা নিতে যাওয়ার জন্য বলে যায়। এ সময় বিজিবির ওই সদস্য তার পরিচয়পত্র ও ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি দোকানে জমা দিয়ে যায়।
পরে সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীরা ৫০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের মূল গেটে গেলে সেখানে এমন কোনো মালামাল নেয়া হয়নি এবং মো. মোবারক হোসেন নামে কোনো বিজিবির কোনো সদস্য নেই বলে ব্যবসায়ীদের জানান সেখানকার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা। ব্যবসায়ীরা প্রতারণার শিকার হয়েছে বুঝতে পেরে ১৫ জুন ঠাকুরগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ঠাকুরগাঁও ইলেকট্রনিক্স দোকানের প্রোপাইটর রেজাউল হাফিজ রাহী জানান, বিজিবির ওই সদস্য প্রথম যেদিন দোকানে এসে মালামাল দেখেন তখন কোনোভাবেই তাকে ভুয়া মনে হয়নি। তার পরনে বিজিবির ড্রেস, হাতে বিজিবির ডায়েরি ও আইডি কার্ড সব কিছুই ছিল। আর ঈদে দোকানে ক্রেতার ভিড়ের কারণে প্রশাসনিক লোক মনে করে বিষয়টি নিয়ে বেশি কথা না বাড়িয়ে মালামালগুলো দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বিজিবির সদস্যরা এর আগেও এভাবেই মালামাল নিয়ে যেত তাই সন্দেহ হয়নি। পরে যখন জানতে পারলাম তিনি বিজিবি সদস্য নয়, তখন তো আমাদের সকলের মাথায় হাত। প্রশাসন একটু সহযোগিতা করলে এই প্রতারক চক্রকে ধরা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ৫০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মোবারক হোসেন নামে এই ব্যক্তি আমাদের সদস্য না। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, শহরের সিসি ফুটেজের সূত্র ধরে ও একটি স্পেশাল টিম দিয়ে এই প্রতারক চক্রকে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
রবিউল এহসান রিপন/এমএএস/আরআইপি