রাস্তা ভেঙে দুর্ভোগে গোপালগঞ্জবাসী


প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০১৫

অতিবর্ষণে গোপালগঞ্জের রাস্তা-ঘাটের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গোপালগঞ্জ পৌরসভা রাস্তাঘাটের। গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতে পৌরসভার ৯৫ ভাগ রাস্তার কার্পেটিং ও সিলকোট উঠে গিয়ে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের সড়কটি একেবারে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী রোড, কলেজ রোড, ডিসি রোড, কোর্ট মসজিদ রোড়, ব্যাংক পাড়া রোড, বদর সড়ক, আলীয়া মাদ্রসা সড়ক, বাজার রোডসহ অধিকাংশ সড়কে জীর্ণদশার কারণে যানবহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

রিকশা চলাচল ও জনগনের হাঁটাচলায় ভোগান্তির অন্ত নেই। গোপালগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায়  কার্পেটিংয়ের রাস্তার পরিমাণ ১১৩.২৮  কিলোমিটার, সেমিপাকা ৯.১৭ কি.মি. ও কাঁচা রাস্তা ১১.০৩ কি.মি.। এরমধ্যে  সিলকোটের রাস্তা শতভাগ, কার্পেটিং এর রাস্তা ৪০ ভাগ, সোলিংয়ের রাস্তার ৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু রাস্তার সোল্ডার ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  

গোপালগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুন কুমার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় এলজিইডি এর অধীনে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে মোট ২ হাজার ৭শ ৬৮ কি.মি.। এরমধ্যে রাস্তা  ৮শ ২৫ কি.মি., এইচবিবি ৩শ ২৩ কি.মি. ও মাটির রাস্তা ১ হাজার ৬শ বিশ কি.মি.। গত কয়েক দিনের অতি বৃষ্টিতে রাস্তায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে কোনো কোনো রাস্তার সোল্ডার ও এজিং নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, এসব সড়কের পাশের মাটির মান ভালো না। সড়কের পার্শ্বে কেউ কেউ আবার কলা গাছ লাগিয়েছেন। ঘের কেটে মৎস্য চাষ করছেন। এতে সেখানে পানি জমে মাটির শক্তি হ্রাস করছে। ফলে গ্রামীণ সড়কের কোনো কোনো স্থানে সোল্ডার ভেঙে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৫-৭ দিনের বৃষ্টিতে সাধারণত কার্পেটিংয়ের রাস্তার তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কম। তবে রাস্তার উপর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকলে তাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

অপরদিকে, গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরন রায় জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক বিভাগের অধীনে জেলায় ৬৫ কি.মি. মহাসড়ক এবং  ৪৫ কি.মি. আঞ্চলিক সড়ক রয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের কোথায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কোনো কোনো স্থানে মাটির সোল্ডার ভেঙে যেতে পারে। সারা বছর আমাদের রুটিং কাজ চলে। সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকলেও তা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।

সবচেয়ে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ পৌরসভার জনগণ। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে শহরের অধিকাংশ রাস্তঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় মানুষ ও যানবহন চলাচলে চরম ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সে সঙ্গে এ দুর্ভোগের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিকে দায়ি করছেন সচেতন মহল।

গোপালগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, জেলা শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের দুটি রাস্তার অবস্থা একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন আগে এ রাস্তা দুটোর রিপিয়ার ও মেইনটেনান্সের কাজ করে। কিন্তু কাজের মান অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় ৩-৪ দিনের বৃষ্টিতে সবকিছু ধুয়ে গেছে।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এস এম মিল্লাত জাগো নিউজকে বলেন, পুরাতন পুলিশ লাইন সড়ক , বদর সড়ক ও পুলিশ লাইন পুকুর পাড়ের পাশের সড়কে অবস্থা এতোই খারাপ যা ভাষায় ব্যক্ত করা যায়না। বাসা থেকে বের হওয়ায়  পর পায়ে হেঁটে চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়ে। কয়েক দিন আগে এসব রাস্তার মেইনটেনান্স ও রিপিয়ারের কাজ করা হয়। মেয়রের ঘনিষ্ট চিহ্নিত কয়েকজন ঠিকাদার রাতের অন্ধকারে এসব কাজ করেন। ফলে কাজের কোনো গুণগত মান রক্ষা হচ্ছেনা। দরপত্রে কোনো নিয়ম নীতি মানা হয় না। ওটিএম পদ্ধতি দরপত্র করার কথা থাকলেও-তা করা হচ্ছে কেবল কাগজ কলমে। ঘুপচি করে কাজের নামে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী  অবিনাশ চন্দ্র কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, টাকার স্বল্পতার কারণে লো-কস্টে এসব রিপিয়ার ও মেইনটানেন্সের কাজ করা হয়। গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে অধিকাংশ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ, পানিতে কার্পেটিংয়ে সড়কের খুব ক্ষতি হয়। পানি বিটুমিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রেজাউল হক সিকদার রাজুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার সকালে তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এস, এম, হুমায়ূন কবীর/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।