মৌলভীবাজারে বারবার বন্যার কারণ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ২৩ জুন ২০১৮

বছর বছর মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর ভাঙনে ক্ষতি হয় শত শত কোটি টাকা। বন্যা বেশি হলে সে ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় কয়েক হাজার কোটিতে। অথচ ১ বছরের ক্ষতির যে পরিমাণ তা দিয়ে স্থানীভাবে মানুষকে এই সম্যসা থেকে মুক্তি দেয়া যায়। কিন্তু এ বিষয়ে উদাসীন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বছর বছর চাহিদাপত্র পাঠায়। সে চাহিদাপত্র মন্ত্রনালয়ে পড়ে থাকে। গত বছরের বন্যায় জেলার সরাসরি এবং বন্যার পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকার হলেও টনক নড়েনি মন্ত্রণালয়ের। বরাদ্দ আসে না অথচ গত বছরের বন্যা পরবর্তী কাজ করতে গিয়ে উল্টো ৮ কোটি টাকা দেনা আছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ২ বছর আগে ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয় কিন্তু মন্ত্রণালয়ে তা লাল ফিতায় বন্দি রয়েছে।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের থেকে ইজারা নিয়ে নির্বিচারে অবৈজ্ঞানিকভাবে যেখান থেকে সুবিধা সেখান থেকেই বালু তুলেন প্রতিটি সরকারি দলের ঠিকাদাররা। মানা হয় না প্রতিরক্ষা বাঁধ এবং সেতু থেকে নিরাপদ দূরত্বের নিয়মও। প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে বালু উত্তোলনের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়।

ভৌগলিকভাবে মৌলভীবাজারের মনু নদ ও ধলাই নদীতে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম থেকে নিচু এলাকায়। উজানে বৃষ্টি হলে সে পানি ধলাই নদী হয়ে মনু নদে ২-৩ ঘণ্টার ভেতরে চলে আসে। এতে নদের ওপর পানির চাপ বাড়ে। কখনো ড্রেজিং না হওয়ায় নদ নদীর পানি উপচে উঠে কখনও দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তৃত এলাকা।

flood

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পরেও জাহাজ চলত মনু নদে, এমনকি শীত মৌসুমে জাহাজ ভিড়ত পশ্চিম বাজারের বর্তমান ঘেয়া ঘাটে। কিন্তু বর্তমানে বছর বছর পাহাড়ি ঢলে প্রচুর পলি মনু ও ধলাই নদীতে আসে এতে নদীর তল দেশ ভরাট হয়ে শতকরা ৬০ ভাগ পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। শীত মৌসুমে কোথাও হাটু পানি কোথাও একেবারে শুকনো। এত বছরেও ড্রেজিং না করা এবং পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় মনু নদ পানি ধারণের ক্ষমতা হারিয়েছে।

১৯৮৪ সালের বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মৌলভীবাজার শহরসহ পুরো জেলা। এর পরপর মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ করা হয় ব্যাপকভাবে কিন্তু এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। ৩৫ বছরের পুরাতন বাঁধ তাই ভেঙে যাচ্ছে প্রতিবছর। মৌসুমে মৌসুমে জোড়াতালির কাজ হয় কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। গত বছর বন্যার পর ১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইলেও মন্ত্রণালয় দেয় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা যার ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা চলে যায় গত বছরের দেনা পরিশোধ করতে। গত বছরের বন্যা পরবর্তী কাজের দেনা এখনও আছে ৮ কোটি টাকা।

৩০০ মিটার প্রস্থ মনু নদের ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ। দুই পাড়ে ১৪৮ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ৩ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান আছে। প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে প্রচুর মোড় অনেক জায়াগ ইউটার্ন করে ঘুরে গেছে নদ এমনি রাজনগনের ভোলানগরসহ কিছু জায়গায় অনেকটা ভি আকৃতির। এক সময়ের ২০ মিটার গভীর মনু নদ বর্তমানে ১০ মিটারেরও কম।

flood

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ১৬-১৭ অর্থবছরে মনু নদের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৪০০ কোটি টাকা চাওয়া হয় কিন্তু তা মিলেনি মন্ত্রনালয়ের অবহেলায়। শহর প্লাবিত হওয়ার আগে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মানতে রাজি ছিল না মৌলভীবাজারে বন্যা হয়।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাসান আহমদ জাভেদ বলেন, একটা স্থানী সমাধানের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বছর বছর বাঁধ ভেঙে বন্যা হবে তা মানা যায় না।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, একটি মাস্টারপ্লান তৈরি করা হচ্ছে। আমরা স্থায়ী সমাধানের চিন্তা করছি। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও সে প্লান বানাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, পাহাড়ি স্রোত এলে মাটির বাঁধ ভাঙবে এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা সামগ্রিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।

রিপন দে/আরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।