বরিশাল নৌবন্দরে মানুষের ঢল
ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। শুক্রবার বরিশালের সড়ক ও নৌপথে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কর্মস্থলে যোগ দিতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢল নামে বরিশাল নৌবন্দরে। লঞ্চগুলো ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে বন্দর ছেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুপুরের মধ্যে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো যাত্রীতে বোঝাই হয়ে যায়। লঞ্চগুলোর কেবিনের সামনের বারান্দা, এমনকি লঞ্চের সামনের অংশও যাত্রীতে ঠাসা ছিল। বিআইডব্লিউটিসির জাহাজসহ বেসরকারি সব লঞ্চ ধারণক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ যাত্রী নিয়ে বন্দর ছেড়ে যায়। এ রকম ভিড় আরও দু’একদিন পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার ১৪টি লঞ্চ বরিশাল নৌবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ অস্ট্রিচ ও টার্ন যাত্রী বোঝাই করে বরিশাল নদী বন্দর ছেড়ে গেছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। আধাঘণ্টা পর পর যাত্রীবোঝাই করে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো। তবে বরিশাল নৌবন্দরে গত দু’দিন ধরে হাজার হাজার যাত্রীর স্রোত নামলেও লঞ্চে যাত্রী তোলাসহ ব্যাপক অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে লঞ্চ টার্মিনালে। বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার বরিশাল থেকে ১৪টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। শনিবারও সমসংখ্যক লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকায় যাবে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের মতে, রোববার নতুন সপ্তাহের কর্মদিবস শুরু হওয়ায় শুক্রবার যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি।
বিকেলে নৌবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকামুখী লঞ্চের পন্টুনের দিকে স্রোতের মতো মানুষ ছুটছে। যাত্রীদের চাপে নৌবন্দর সংলগ্ন পোর্ট রোড, বান্দ রোড ও ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবন-১০ লঞ্চের যাত্রী কলেজ ছাত্র মো. সোহেল জানান, ঢাকায় যাওয়ার জন্য পটুয়াখালীর বাউফল থেকে রওনা হয়ে বিকেল ৪টায় বরিশাল লঞ্চঘাটে পৌঁছেন তিনি। তার আগেই লঞ্চের ডেকের যাত্রীদের জায়গা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়েও তিনি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের ছাদে ঠাঁই নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন।
এদিকে টার্মিনালে এবং লঞ্চে যাত্রী ওঠা নিয়ে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা ছিল বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। অধিকাংশ লঞ্চে ওঠার সিঁড়ির দু’পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। এ কারণে ঘটেছে দুর্ঘটনাও। বিকেল ৫টার দিকে পারাবাত-১২ লঞ্চে উঠতে গিয়ে নদীতে পরে যান পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পৈকখালী গ্রামের মো. জুনায়েদ। টার্মিনালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন। আরও এক যাত্রী নদীতে পড়ে নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বরিশাল নৌবন্দর থানা পুলিশের ওসি বেল্লাল হোসেন জানান, দুপুর ৩টার পর থেকেই যাত্রীরা লঞ্চঘাটে আসতে শুরু করেন। পন্টুনে থাকা ১৪টি লঞ্চ বিকেল ৫টার আগেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নির্ধারিত ডেকে জায়গা না পেয়ে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের কেবিনের সামনে ও লঞ্চের ছাদেও ঠাঁই নিয়েছে যাত্রীরা। তিনি জানান, গত কয়েক দিনের মধ্যে শুক্রবার বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ ও আনসার সদস্য মিলিয়ে দেড় শতাধিক সদস্য কাজ করছে। তবে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে তাদের দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনের মধ্যে শুক্রবার বেশি যাত্রী ছিল। তবে সেটা কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বোঝাই হতে দেয়া হয়নি। যাত্রী বোঝাই হয়ে যাওয়ায় সময়ের আগে কয়েকটি লঞ্চকে বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এদিকে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী গ্রীনলাইন- ৩ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গতকাল দুপুরে যাত্রা বাতিল করে। ফলে বিপাকে পড়েন অগ্রিম টিকিট নেয়া ছয় শতাধিক যাত্রী।
সাইফ আমীন/ওআর