১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ১৮ জুন ২০১৮
ইনসেটে নিহত হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া ট্রাফিক পুলিশের তৎকালীন সার্জেন্ট এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ট্রাফিক পুলিশের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ফেনীর রামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সন্ধ্যায় কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়া মাস্টারের ছেলে।

এদিকে টিআই হেলালের মৃত্যুর খবরে তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। তার পরিবারের লোকজন এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

ফেনী জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মীর গোলাম ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা থেকে রোববার নিজে প্রাইভেটকার (চট্ট-মেট্রো-গ-১১-৫১৪১) চালিয়ে চট্টগ্রামে কর্মস্থলের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।

পথিমধ্যে দুপুর পৌনে ২টার দিকে ফেনী জেলার রামপুর এলাকায় পৌঁছার পর তার গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে ছিটকে গিয়ে আরও একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ওই প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার ওই হাসপাতালে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।  গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তবে টিআই হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়ার পর তৎকালীন সরকার তাকে হয়রানিমূলক বদলিসহ মানসিকভাবে নির্যাতন করেছিল। ওই সময় তাকে হত্যার হুমকিও আসতো বলে তারা দাবি করেন।

তার পরিবার ও স্বজনদের দাবি, এটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।

চান্দিনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শামছুল ইসলাম জানান, সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত করার পর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ আসর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।

তার পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় কেরণখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ জানান, হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এ দুর্ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় আছে কি-না তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার ঘাটে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসের সময় ঘটনাস্থলে প্রথম উপস্থিত হন তৎকালীন সার্জেন্ট ও কয়লার ডিপো ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন ভূঁইয়া। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান বাদী হয়ে চোলাচালান ও অস্ত্র আইনে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় আদালত সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অস্ত্র আইনের মামলায় তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

কামাল উদ্দিন/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।