অতিরিক্ত ভাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার সড়কে শ্রীপুর অংশে এবারের ঈদ যাত্রায় বড় কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি সাধারণ যাত্রীদের। তবে পরিবহন সংকটের কারণে খোলা ছোট ট্রাক, পিকআপ ও লেগুনায় ঝুঁকি নিয়ে ঈদ যাত্রা শুরু করেছেন যাত্রীরা। পরিবহন সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত। প্রতিবছর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে তারা নাড়ির টানে বাড়ি যান। এবারও গত বুধবার হতে কারখানা ছুটি হওয়ায় তারা বাড়ি যাচ্ছেন। আগে রাস্তার দুরবস্থার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হতো এখন আর সে অবস্থা নেই। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর দুর্ভোগ নেই বললেই চলে। এবারের ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে যানবাহনের জট না থাকলেও যানবাহনের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। অনেকেই চাহিদা মত যানবাহন না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপকে বেছে নিচ্ছেন। তবে ঢাকামুখী পরিবহনে তেমন কোনো চাপ দেখা যায়নি।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার আলমগীর হোসেন চার সদস্যের পরিবার নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় ভাড়া থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুক্রবার সকাল থেকে দীর্ঘ এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর বাস না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে পরিবারসহ উঠেছেন ছোট ট্রাকের ওপর।
তিনি জানালেন, অনেকটা পথ যেতে হবে, কাঙ্ক্ষিত পরিবহন না পেয়ে বাধ্য হয়েই মিনি পিকআপে উঠেছেন। বছরের অন্যান্য সময় মাওনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের ফুলপুর পর্যন্ত পরিবহন ভাড়া সর্বোচ্চ ১২০ টাকা নেয়া হয়। কিন্তু ঈদ উপলক্ষ্যে মিনি ট্রাকে ২০০ টাকা করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চারজন সদস্যর জন্য গুনেছেন ৮০০ টাকা।
শ্রীপুর পৌর এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা থেকে চার হাজার টাকায় একটি লেগুনা ভাড়া করে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন পাঁচটি পরিবারের ১২ জন সদস্য। মহাসড়কে লেগুনা এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ তারপরও লেগুনাকেই ঈদ যাত্রার বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন কারখানা শ্রমিক রুহুল আমীন।
তিনি বলেন, বাসের চাইতে লেগুনাতে চলাচল সহজ হবে চিন্তা করেই যাচ্ছি। আস্তে আস্তে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।
হালুয়াঘাটগামী সোহলে রানা জানান, নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে দুপুর থেকে ভালো একটা বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু ঢাকা থেকে যে সকল বাস ময়মনসিংহ বা হালুয়াঘাটের উদ্দেশ্যে আসছে তার অধিকাংশই বাসেই যাত্রী ভর্তি। ভেতরে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে বাসের ছাদে উঠে যাওয়ার কোনো পরিবেশও নেই।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার পোশাক কারখানার শ্রমিক দেলোয়ারা বেগম বলেন, সবসময় মাওনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত করতাম। এখন ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে ২৫০ টাকা। তারপরও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। যে টাকা বোনাস পেয়েছিলাম তা হয়তো পরিবারসহ ঈদে যাতায়াতেই খরচ হয়ে যাবে।
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, মহসড়কের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল দিচ্ছে। এবার কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে মহাসড়কে যানবাহন কম থাকায় এখনও বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। তবে কোনো যানজট নেই।
শিহাব খান/আরএআর/পিআর