শ্রমিক সংকটে জনপ্রিয় হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ০৫ জুন ২০১৮

টাঙ্গাইলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত শ্রমিক মজুরি কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত শ্রমিক মজুরির কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আধুনিক কৃষিযন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার।

এ মেশিন দিয়ে একজন শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন এবং মাড়াই, ছাঁটাই ও বস্তা ভর্তিকরণ করা যায়। পাশাপাশি মেশিনে প্রতি বিঘা ধান কাটতে খরচ হয় ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫শ’ টাকা। একইভাবে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতেও সক্ষম এই আধুনিক কৃষিযন্ত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলায় হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কালবৈশাখী, প্রচুর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ফলে ধানকাটা শ্রমিকরা মাঠে যেতে অনীহা প্রকাশ করায় স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না কৃষক। ধান কাটা শ্রমিকের সংকট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে জমি তৈরি থেকে ধান কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয় উৎপাদিত ধানে সে খরচ ওঠে না। ফলে কিছু ধানখেতেই নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম হওয়ায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৭০ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। জেলায় মোট ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছরের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এ মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত প্রায় এক মাসে টাঙ্গাইলের মোট আবাদের প্রায় ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মণ ধান কাটতে পারেন। সেজন্য তাকে মজুরি দিতে হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান হয় সর্বোচ্চ ২৫ মণ। ২৫ মণ ধান কাটতে মোট শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ১০ থেকে ১২ জন। এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে খরচ হয় সাত হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। চাষ, বীজ, সার খরচের সঙ্গে কাটা, মাড়াই ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ যোগ করলে ধানের যে দাম পড়ে এবং ধানের যে বাজার মূল্য, তাতে কৃষক কোনোভাবেই ধান চাষ করে লাভবান হতে পারে না।

অপরদিকে, একটি মেশিন দিয়ে একজন শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

কৃষকরা জানায়, ক্রমাগত শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে চাষাবাদ যান্ত্রিকীকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা, ছাঁটাই বা মাড়াই ও বস্তাভর্তি করা সবই মেশিন দিয়ে করা যায়। ফলে এই মেশিনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যদি এ মেশিন কৃষকদের মাঝে স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করা হয় তবে কৃষকরা আরও লাভবান হবে। ধানের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রটি দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩৩ শতাংশ জমির ধান ও গম কেটে মাড়াই ও পরিষ্কার করে বস্তায় ভর্তি করা যায়। ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের এ যন্ত্রটি ৫০% হারে উন্নয়ন সহায়তায় মাত্র ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কৃষকের মাঝে প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া ধান রোপণ করার সময় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার সরবরাহ করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আরিফ উর রহমান টগর/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।