থ্রি হুইলার বন্ধে যাত্রীদের দুর্ভোগ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের ২০ কিলোমিটার এলাকায় সকল ধরনের থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। মহাসড়ক হয়ে সিএনজি স্টেশনে যাওয়ার পথে পুলিশ ও ভ্র্যাম্যমাণ আদালতের সম্মুখীন হয়ে দিতে হচ্ছে জরিমানা।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার পাকল্যা, বাশতৈল, পাথরঘাটা, গোড়াই, ভাবখন্ড, ভাতগ্রাম, ফতেপুর, মহেড়া, বহুরিয়া, ক্যাডেট কলেজ এবং মির্জাপুর সদর থেকে প্রায় তিন হাজার বিভিন্ন প্রকার থ্রি হুইলার যানবাহন উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক হয়ে মহাসড়কে চলাচল করে। সরকার ১ আগস্ট থেকে সকল ধরনের থ্রি হুইলার মহাসড়কে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন, রাশেদ, কুতুব বাজার এলাকার রাসেল, সদরের নাসিম জানান, তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনেছেন। সরকার বিকল্প ব্যবস্থা না করে মহাসড়কে সকল ধরনের থ্রি হুইলার বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন তারা। মাস শেষে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বিপাকে পড়বেন বলে তারা জানান।
তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে থ্রি হুইলার চলাচল করলেও গ্যাস নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের। মহাসড়ক হয়ে সিএনজি স্টেশনে যাওয়ার পথে পুলিশ ও ভ্র্যাম্যমাণ আদালতের সম্মুখীন হতে হচ্ছে চালকদের। সেখানেও গুণতে হচ্ছে জরিমানা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আজিজুল, জামাল ও আলমগীর হোসেন জানান, গাড়িই তাদের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। মহাসড়কে সকল প্রকার থ্রি হুইলার চালানো বন্ধ করায় তারা বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিন মালিকদের ৫শ টাকা জমায় গাড়ি চালাতে হয়। সকল রোডের থ্রি হুইলার এখন গ্রামীণ সড়কে চলাচল করছে। গ্রামীণ সড়কে চালিয়ে জমার টাকাও আয় করা যায় না। এ কারণে অনেকেই গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন বলে তারা জানান।
মহাসড়কে থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গন্তব্যে যাওয়া মানুষদের। মির্জাপুর বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী মো. খোকন শিকদার বলেন, হাটাভাঙ্গা এলাকা থেকে প্যাডেলচালিত ভ্যানে মুরগি নিয়ে আসার সময় গোড়াই এলাকায় পুলিশ আটকে দেয়।
সড়কে অন্য কোনো গণপরিবহন না থাকায় হেঁটে হেঁটে মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
মির্জাপুর উপজেলা থ্রি হুইলার শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব হোসেন বলেন, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে, মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদ নিয়ে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ করে মালিকরা গাড়ি কিনেছেন। মহাসড়কে থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল বন্ধ করায় সদরের প্রায় দেড় সহস্রাধিক মালিক ও শ্রমিকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিপাকে পরেছেন মালিক ও শ্রমিক। শ্রমিকদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় তারা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ডের বুকিং মাস্টার আব্দুল আলীম বলেন, গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত প্রতিদিন ৩৮/৪০টি বাস ১২ মিনিট পর পর চলাচল করে। তাছাড়া সাগরদিঘী থেকে ৮/১০টি বাস ৩০ মিনিট পর পর মির্জাপুর হয়ে টাঙ্গাইল শহরে চলাচল করে থাকে। মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. মাসুম আহমেদ বলেন, সকল ধরনের থ্রি হুইলার আঞ্চলিক সড়কে চলাচল করবে। প্রতিদিন ভোরে এবং রাত ৮টার পর থ্রি হুইলারের চালকেরা সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নিতে পারবেন। গ্যাস নেয়ার সময় গাড়িতে কোনো যাত্রী থাকতে পারবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসএস/পিআর