মাদকবিরোধী অভিযান : মৌলভীবাজারে অধরা মূলহোতারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ২৮ মে ২০১৮

মৌলভীবাজারে র‌্যাব পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতারা ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশের অন্য জেলার তুলনায় মৌলভীবাজারে মাদকবিরোধী অভিযান অনেকাটাই শিথিল। তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক বিমান চন্দ্র কর্মকার ও জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ জালাল। গত কয় দিনের মাদকবিরোধী অভিযানে সারাদেশে প্রচুর রাগব-বোয়ালরা ধরা পরলেও মৌলভীবাজারে অদৃশ্য কারণে মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর যাদেরকে ধরা হচ্ছে অধিকাংশ মাদকের খুচরা ক্রেতা এবং মাদকসেবী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমাজকর্মী জানান, জেলার প্রতিটি চা বাগানে লাইন্সেস প্রাপ্ত দেশিয় মদের দোকান রয়েছে। দেশিয় মদ ধরে কী লাভ? তাই চলমান অভিযানে সারাদেশের মত মৌলভীবাজারেও ইয়াবা ফেনসিডিলের ব্যবসায়ীদেরকে ধরতে হবে।

পুলিশ জানায়, চলমান অভিযানে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে, মামলা হয়েছে ৫টি। কুলাউড়া থানায় আটক করা হয়েছে ১২ জনকে মামলা হয়েছে ১২টি। জুড়ি থানায় আটক করা হয়েছে ১১ জনকে মামলা হয়েছে ১১টি।

কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ জাগো নিউজকে জানান, আমার সার্কেলে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে ৩২ জনের লিস্ট করা হয়েছে তা ধরেই অভিযান চালানো হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত আসামি ছাড়াও আরও কিছু মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

তিনি জানান, ৩-৪ জন পলাতক আছে এছাড়া সবাইকে আমরা আটক করতে পেরেছি। সে হিসেবে আমার সার্কেল মাদক বিরোধী অভিযানে সফল।

কমলগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তাদির হোসেন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মামলা হয়েছে ৩টি তবে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের খোঁজছে পুলিশ।

এ বিষয়ে রাজনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, চলমান অভিযানে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে মামলা হয়েছে ৪টি।

এ দিকে মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বড় মাদকের স্পট এবং মাদকের মূলহোতাদের আস্তানা সদর এবং শ্রীমঙ্গল থানা। অথচ এ দু’টি থানাতেই চলমান অভিযানে নিষ্ক্রিয় রয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দুই থানায় অর্ধ শতাধিক স্পটে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের রমরমা ব্যবসা চলে কিন্তু পুলিশ কোনো কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে না।

Drug-7

শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, অভিযান অব্যাহত আছে সফলতার হিসেব অভিযান শেষে বলা যাবে।

এ দিকে ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত পথে মৌলভীবাজারে অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক নামানো হয়। দেশব্যাপী চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যেও আসছে নতুন নতুন ফেনসিডিলের চালান। রোববার দুপুরে শ্রীমঙ্গলের ভারত সীমান্তবর্তী মন্দিরা গ্রামে মাদক সম্রাট জুনুন বিশাল ফেনসিডিলের চালান ভারত থেকে নিয়ে এসেছে বলে বিশ্বস্তসূত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য জুনুন দীর্ঘদিন যাবৎ ফেনসিডিলের ব্যবসা করে আসছে যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই অভিহিত। বারবার গণমাধ্যমে নাম আসলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে চলমান অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই জুনুনের ফেনসিডিল ব্যবসা।

জানা যায়, ভারত থেকে আনা মাদক বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তা চলে যায় খুচরা ব্যবসায়ীদদের হাতে। খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে তা চলে যায় বিভিন্ন স্পটে। মৌলভীবাজারের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাদক স্পট হলো- সীমান্তবর্তী ফুসকুড়ি ফিনলে চা বাগান এলাকা, রাজঘাট ফিনলে চা বাগান এলাকা, সিন্দুরখাঁন, সিন্দুরখাঁনের বালুর ঘাট, মন্দিরগাঁও, কুঞ্জবন, শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশ, শ্রীমঙ্গল শহরের লালবাগ এলাকা, কলেজ রোড,জোড়াপুল, রেলওয়ে গেটের পাশে নার্সারি, শাহজীবাজার, পশ্চিম ভাড়াউড়া, সবুজবাগ এলাকার ত্রিমুখী পুল, পশ্চিম ভাড়াউড়া, কালীবাড়ি বাজার, লইয়ারপুর কামার পাড়া, জাম্বুরা ছড়া, জানাউরা, উত্তরসুর, পূর্বাশা, কলেজ রোড জোড়াপুল, সুরভীপাড়া, ও মৌলভীবাজার সদরের বর্ষিজোড়া, বড়হাট, বেরীরচর চাঁদনীঘাট ব্রিজের নিচ, টেংরা বাজার, আথানগীরী, শমসেরগঞ্জ আর এই সব মাদক ব্যবসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত ৫০ প্রভাবশালী ব্যক্তি।

মৌলভীবাজার জেলায় শুধু শহরে নয় মাদক ব্যবসা এখন উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ফোন দিলেই হেলমেট পরিহিত মাদক ব্যবসায়ীরা বাইকে মাদক পৌঁছে দিয়ে আসে। আবার ক্রেতারাও প্রকাশ্যে এসে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, মাদক আসে বর্ডার দিয়ে। ফেনসিডিল ভারত থেকে এবং ইয়াবা মিয়ানমার থেকে সে ক্ষেত্রে বিজিবি চাইলে সবার আগে মাদকের উৎস বন্ধ করতে পারবে। এ ছাড়া এমনিতে বন্ধ হবে না। কারণ ১০টা ইয়াবা বিক্রি করতে পারলে ২ হাজার টাকা লাভ হয় অথচ ২০ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করেও তা সম্ভব না।

তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা লাভজনক এ ব্যবসায় একাধিক বিনিয়োগ করেন। গ্রেফতার হলে যাতে তারা নিঃস্ব না হন, সেজন্য এ ব্যবস্থা। একবার গ্রেফতার হলে পরবর্তীতে দ্বিতীয় পুঁজি (টাকা) দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের বেশি দিন কারাগারে থাকতেও হয় না।

র‌্যাব ৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক বিমান চন্দ্র কর্মকার জাগো নিউজকে জানান, শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কাউকে ছাড়া হবে না, অভিযানে সময় লাগতে পারে তবে মাদক ব্যবসায়ীদের শতভাগ নির্মূল করা হবে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ জালাল জাগো নিউজকে জানান, সারা দেশের মত মৌলভীবাজারেও অভিযান অব্যাহত আছে।

মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গলে অভিযান শিথিলের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযান শিথিল না হয়তবা আমরা যাদেরকে টার্গেট করছি তাদেরকে ধরতে পারছি না তবে অভিযান অব্যাহত আছে।

রিপন দে/আরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।