‘ব্ল্যাক ক্যাফে’ ঘিরে কৌতুহল
রাজশাহীর রহস্যময় রেস্তোরাঁ ‘ব্ল্যাক ক্যাফে’ঘিরে নগরবাসীর মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ রেস্তোরাঁটির মালিক আসলাম সরকার গ্রেফতারের পর আলোচনার কেন্দ্রে আসে রেস্তোরাঁটি। এরপর থেকেই নগরজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
গত বুধবার কক্সবাজারে একলাখ আট হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন আসলাম। আসলাম সরকার নগরীর রজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার আজিজুল আলমের ছেলে। ৪০ বয়সী এ মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক।
আসলাম ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান চালান। ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ইয়াবা চোরাচালান নিয়ন্ত্রন করেন তিনি। কথিত এ প্রতিষ্ঠানটি কলাকুশলী নিয়ে কক্সবাজারে মিউজিক ভিডিও বানাতে গিয়ে গত বুধবার ইয়াবাসহ ধরা পড়েন রাজশাহীর শীর্ষ এ ইয়াবা ব্যবসায়ী।
ঘোষপাড়া মোড়ের উত্তরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) মিলানায়নের উল্টো দিকে তিন তলা ভবনে গড়ে উঠেছে ‘ব্ল্যাক ক্যাফে’ রেস্তোরাঁ। খাবারের মানের দিক দিয়ে নগরীতে এর তেমন খ্যাতি নেই। কালো টাইলস ও কাঁচ ঘেরা রেস্তোরাঁটির দরজা সব সময় বন্ধ রাখা হতো। বুঝার উপায় নেই এর ভেতরে কী ঘটছে। অপরিচিত কেউ ক্যাফের মূল অংশে প্রবেশের সুযোগ পেতেন না।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, ব্ল্যাক ক্যাফেতে যাতায়াতকারীরা নগরীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পাশের মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত যাতায়াত করতেন সেখানে। মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিয়মিত আসর বসতো ক্যাফেতে। আর ক্যাফেটির পাশের ভবনটি সরকার প্রোডাকশন হাউসের অফিস। সেখানকার কথিত মডেলরাই হয়ে উঠতেন মধুচক্রের মধ্যমণি। নগরীর ধনির দুলালরা মত্ত থাকতেন এসব আসরে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এসব অপকর্ম চললেও সেখানে অভিযান চালায়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযোগ রয়েছে, আসলাম সরকারের এ দুটি প্রতিষ্ঠানেই ইয়াবা ফেনসিডিলসহ সবধরণের মাদক বিক্রি হতো। চলতো অসামাজিক কার্যক্রম। এখান থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসলাম সরকার এক সময় টেলিফোনের দোকানের সামান্য কর্মচারী ছিলেন। ছয় থেকে সাতটি বিয়েও করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় নারীঘটিত একাধিক মামলাও রয়েছে। নগরীতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। কিনেছেন একাধিক প্লট। ঘোরেন বিলাসবহুল গাড়িতে।
আসলামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বাঘার কালাম মোল্লা। রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ এ মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের খাতায় নিখোঁজ। অথচ মোস্ট ওয়ান্টেড কালাম মোল্লা এখনও সক্রিয় অপরাধ জগতে। নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার আসলামের মালিকানাধীন ব্ল্যাক ক্যাফেতে। বেশ কয়েকটি অভিজাত ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এখানেও তার সহযোগী আসলাম।
এদিকে আসলাম গ্রেফতারের পর থেকে ব্ল্যাক ক্যাফে ও সরকার প্রোডাকশন হাউস কার্যত বন্ধ। এখন সেখানে আর যাতায়াত নেই কারও। আসলামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন। আত্মগোপনে চলে গেছেন কথিত সেইসব মডেলরাও।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, কক্সবাজারে ইয়াবার বিশাল চালানসহ গ্রেফতার হবার পর আসলামের ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিতে শুরু করেছি। তিনি অত্যন্ত কৌশলী এবং চতুর। তার মাদক নেটওয়ার্ক এবং সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ চলছে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/পিআর