সারাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত
চলমান রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান। গত কয়েকদিনের মতো আজ রাতেও (সোমবার দিনগত) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সারাদেশে ১০ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকালও বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৯ জনকেও মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লায় ২, নীলফামারীতে ২, চট্টগ্রামে ১, নেত্রকোনায় ১, দিনাজপুরে ১, নারায়ণগঞ্জে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ ও চুয়াডাঙ্গায় ১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কুমিল্লা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও থানা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরীফ (২৬) ও পিয়ার (২৮) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা তালিকাভুক্ত শীর্ষ দুই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে পুলিশ। সোমবার রাত পৌনে একটার দিকে জেলা সদরের অদূরে বিবিরবাজার অরণ্যপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজেরো জিপ, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানকালে কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রূপকুমারসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের একটি বড় চালান আসছে এমন খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। রাত পৌনে ১টার দিকে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শরীফ, পিয়ার আলী ও সেলিম গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার মাদক ব্যবসায়ী শরীফ ও পিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সোমবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীদের ককটেলের আঘাতে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ককটেল, দেশীয় অস্ত্র , ইয়াবা এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- সৈয়দপুর পৌর শহরের ইসলামবাগ মহল্লার আব্দুল হান্নানের ছেলে মো. জনি হোসেন (২৭) ও নিচু কলোনী মহল্লার ইউসুফ হোসেনে ছেলে শাহিন আহমেদ (৩০)।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর ইসলামবাগ মহল্লা থেকে জনিকে এবং নিচু কলোনী মহল্লা থেকে শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের তথ্য অনুযায়ী বাইপাস মহাসড়কের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় অপর দুই মাদক ব্যবসায়ী জসিয়ার ও নূর বাবুকে ধরতে ও মাদক উদ্ধারে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এই সুযোগে গ্রেফতার জনি ও শাহিন পালানোর চেষ্টা করলে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে তারা নিহত হন।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরের বায়োজিদ থানার ডেবারপাড় এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুক্কুর আলী (৪৩) নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে কামরুজ্জামান সাধু নামে এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সোমবার রাত ২টার দিকে শহরের রেলস্টেশনের পেছনে এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি ও ১ বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাতে বিশেষ অভিযানে বের হয় থানা পুলিশ। পুলিশের গাড়ি আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের নিকট পৌঁছলে তাদের গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেন। গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে এসে মরদেহটি কামরুজ্জামান সাধুর (৪৫) বলে শনাক্ত করেন।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ খান জানান, নিহত কামরুজ্জামান সাধু থানার তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় ৬টি মাদক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তার ৩ বছরের সাজা হয়েছে।
নেত্রকোণায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মঙ্গলবার ভোরে আমজাদ নামে এক অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় সদর থানার ওসিসহ আরও ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী আমজাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যমতে সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের বড়য়ারী এলাকায় অভিযান চালানোর সময় পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা তার সহযোগীরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় আমজাদ নিহত হয়।
নেত্রকোণা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, আমজাদ একজন ভাড়াটে খুনি ও অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় ১৩টি বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মঙ্গলবার ভোরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বাচ্চু খান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় র্যাব তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারে গেলে বাচ্চুসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ও র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু নিহত হয় এবং বাকি দুজন পালিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া (৩৫) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় র্যাব-১০ এর সদস্যদের সঙ্গে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ধন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এ ঘটনায় ধন মিয়ার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে।
র্যাব-১০ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় ধন মিয়া মাদকের চালান নিয়ে সেখানে পৌঁছালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালাতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ধন মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার কাছ থেকে ১১ হাজার ৭শ পিস ইয়াবা, একটি পিস্তল, নগদ ৪৮ হাজার ৭শ টাকা ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে।
দিনাজপুরের বিরামপুরেও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মো. প্রবল হোসেন (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার ভোরে বিরামপুর থানার এক দল পুলিশ পৌরসভার মনিরামপুর মাঠে টহল দিচ্ছিল। ওই সময় ১০-১২ জন মাদক ব্যবসায়ী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে মাদক ব্যবসায়ী মো. প্রবল হোসেন নিহত হয় ও বাকি মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। নিহত প্রবল হোসেন একাধিক মামলা আসামি। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ৫টি ককটেল এবং ৯২ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
এফএ/পিআর