মঞ্জুর পরাজয়ের নেপথ্যে
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরাজয়ের কারণ খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পরাজয়ের কারণ গুনে শেষ করতে পারছেন না তারা।
বিতর্কিত নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন, প্রার্থীর অতি আত্মবিশ্বাস, যোগ্য নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, দলের একটি বৃহৎ অংশকে উপেক্ষা করা, কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণে দূরদর্শিতার অভাব, নির্বাচন পরিচালনার অর্থ লোপাট, মেয়র প্রার্থীর আস্তাভাজনরা মাঠে না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে মঞ্জুকে পরাজিত হতে হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এখন যোগ্য ব্যক্তিকে নগর কমিটিতে পদ-পদবি দেয়ার দাবিতে ফুঁসে উঠছেন তারা। অনেকে ইতিমধ্যে দল ত্যাগ করে অন্যদলের সঙ্গে পথচলাও শুরু করেছেন।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অসংখ্য কারণে দলীয় প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরাজয় হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- প্রার্থী নিজেই শুরু থেকে বলে আসছেন অন্তত এক লাখ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হবেন। তার এই অতি আত্মবিশ্বাসী মনোভাবই তার পরাজয় ডেকে এনেছে। তাছাড়া ওয়ার্ডগুলোতে যাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে তা ছিল বিতর্কিত। যারা দলের প্রয়োজনে মাঠে থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তাদেরকে পদ পদবি না দিয়ে অনেক আগেই নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ওয়ার্ড কমিটিগুলোর নেতাকর্মীরা ঠিকভাবে কাজ না করা, কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণে আত্মীয়করণ করা, নগরীর খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় বিএনপির যে সব পরীক্ষিত নেতা রয়েছেন তাদেরকে অবমূল্যায়ন, কেন্দ্রের নির্দেশ সত্ত্বেও দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে যারা পরিচয় দেন তারা ভোটের দিন মাঠে না থাকা, নির্বাচনী খরচ আত্মসাত করা, জাল ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসনের নীরব দর্শকের ভূমিকায় নির্বিঘ্নে আওয়ামী লীগের অনিয়ম, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিএনপি দলীয় বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতা, নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরাজয় হয়েছে।
অপরদিকে খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাওয়া ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার (খুলনা-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে এই এলাকায় ভোট কমে যায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ভোটগ্রহণের দিন বিএনপি ও ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে অবস্থান না করার ঘটনায় দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় দলীয় কোন্দলের বিষয়টি আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে। তারা দলকে ঢেলে সাজানোর দাবিও তুলেছে। দলীয় হাইকমান্ড থেকে সব নেতাকর্মীকে মাঠে নামতে বলা হয়েছিল। কয়েকটি কেন্দ্রে নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ কেন্দ্রে দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন না। তারা মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ ভোট কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারত না। আর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে সহিংসতায় ভোট কেন্দ্র বন্ধ হতো। এতে বিএনপি লাভবান হতে পারতো।
খুলনা মহানগরীর খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী অঞ্চলের একটি বৃহৎ অংশের নেতৃত্ব দেন নগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানার সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু। নগর কমিটি নিয়ে তার সঙ্গে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরোধ অনেক পুরনো। নির্বাচনের আগে তাকে একবারের জন্য ডাকেননি মঞ্জু। কেন্দ্রীয় নেতারা মিঠুকে ডাকার পরামর্শ দিলেও তা কাজে আসেনি। এ নির্বাচনে ওই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন অনেকেই।
খালিশপুর ও দৌলতপুর অঞ্চলের অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের জন্য যে খরচ দেয়া হয়েছিলো, তা ২/৩ জনে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। কর্মীরা নিজেদের পকেট থেকে খরচ করে নির্বাচনী কাজ করেছে।
খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হয়েছে। এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। এ কারণে ভোটের দিন নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ কেন্দ্রে কম ছিল। ভোট কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি বেশি হলে ফল এমন হতো না।
দলীয় কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলীয় কোনো কোন্দল নেই। আমরা ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী করার জন্য কাজ করেছি।
নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক সামছুজ্জামান চঞ্চল বলেন, অন্য কোনো কারণ নয়, ভোট ডাকাতির কারণে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরাজয় হয়েছে। সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে ভোট ডাকাতি করে মঞ্জুর জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারেনি। এই সুযোগে ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/জেআইএম