লিচুর আয়ে জীবন চলে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ১৭ মে ২০১৮

গ্রামের নাম মঙ্গলবাড়িয়া। এ গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা লিচুচাষ। গ্রামের নামেই লিচুর নাম। মঙ্গলবাড়িয়া লিচু এ এলাকার মানুষকে এনে দিয়েছে সুখ আর সমৃদ্ধি। প্রসিদ্ধ এ লিচুর কদর এখন দেশ জুড়ে। লিচুর আয়েই চলে এলাকার মানুষের সারা বছরের ভরণ-পোষণ।

সিঁদুরে লাল টুকটুকে এ লিচু এক নামে প্রসিদ্ধ সারা দেশে। নাম শুনলে জিভে জল এসে যায়। লাল টুকটুকে সুস্বাদু লিচুর রং আর গন্ধে মাতোয়ারা পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর আবাদ। এ মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে। এখন লিচুর ভরা মৌসুম। তাই লিচু ঘিরেই মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে এক ভিন্ন উৎসব চোখে পড়ে।

jagonews24

প্রায় একশ বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের হাশিম মুন্সি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। এভাবে এ উন্নত লিচুর জাত ছড়িয়ে পড়ে সারা গ্রামে। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়ায় গ্রামে দেড় লাখেরও বেশি লিচু গাছ রয়েছে।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের সফল চাষি মো. শামসুদ্দিন। লিচুর আয় থেকে সংসার চালিয়েও ৫ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন। মানুষ করেছেন, ৩ ছেলেকেও। এখন তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। তিনি একজন সুখী মানুষ। বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে বিশালাকৃতির ৬৫টি লিচু গাছ। প্রতি মৌসুমে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন।

তিনি জানালেন, লিচু গাছগুলো তার ছেলের চেয়েও বেশি উপকারী। লিচু চাষ করে তার যে আয় হয় তা বছরে ১০ একর জমিতে উৎপাদিত ধানের চেয়ে বেশি।

jagonews24

একই গ্রামের মো. তৌহিদ মিয়ার মালিকানায় এবার দেড় শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। তিনি এ এলাকার প্রথম সফল লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী। ৪০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। তৌহিদ মিয়া বলেন, এবার সময়ে সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। তাই লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার তিনি অন্তত ২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করবেন বলে আশাবাদি।

ভাইকে সঙ্গে নিয়ে অনেক দিন ধরে লিচুর ব্যবসা করছেন মো. মামুন মিয়া। তিনি জানান, এবার তারা ৩শ গাছ কিনেছেন। এসব গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

এমন সফলতার খোঁজ মেলে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের আনাচে-কানাচে। লিচু চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন মঙ্গলবাড়ি গ্রামের অনেকেই।

jagonews24

বড় আকৃতি, ছোট বীজ, রসে ভরপুর এবং সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর কদর সবখানে। এখন লিচুর ভরা মৌসুম। আর তাই মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। গাছ থেকে লিচু পেড়ে গাছের নিচেই প্যাকেট করে সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ লিচু।

পাকুন্দিয়ার শত শত মানুষ লিচু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা পাকা লিচু প্রসেস করে ডাটা ও পাতাসহ বেতের ঝুড়িতে প্যাকেট করে ঢাকার ওয়াইজঘাটে ও সিলেটের রেলগেটে পাঠান। প্রতি টুকরিতে এক হাজার থেকে ১২শ লিচু থাকে। প্রতি টুকরি লিচু বিক্রি হয় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

নূর মোহাম্মদ/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।