‘জালিয়াতি-কারচুপির’ অভিযোগে শেষ হলো কেসিসি নির্বাচন
শেষ হয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ২৮৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। জাল ভোট প্রদান ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, জালিয়াতি, কারচুপি, ভোট ডাকাতির ফলাফল খুলনাবাসী মেনে নেবে না।
তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ভোট কেন্দ্র দখল, বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া ও জালভোট দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া, হুমকি-ধামকি ও ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকেল ৩টার দিকে অধিকাংশ কেন্দ্রে ৫৫ ভাগ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় বলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে দুটি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের ঘোষণার কথা জানান জেলা নির্বাচন অফিসার আনিস রহমান।
স্থগিত হওয়া ভোট কেন্দ্র দুটি হলো- ২০২নং ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের একটি বুথ এবং খুলনা মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ভোট কেন্দ্র।
জেলা নির্বাচন অফিসার আনিসুর রহমান জানান, ২০২নং ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ৭০৭নং বুথে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের ৫০-৬০ জন লোক প্রিজাইডিং অফিসার খলিলুর রহমানের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে সেই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়াও খুলনা মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আমির হোসেন জানান, দুপুর ১২টার দিকে ৮-১০ জনের একদল দুষ্কৃতিকারী কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেলের পক্ষে ঝুড়ি মার্কায় সিল মারে। এ ঘটনায় ভোট গ্রহণ তাৎক্ষণিক স্থগিত করা হয়। পরে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ পুরোপুরি স্থগিত করা হয়।
এদিকে ২২নং ওয়ার্ডের বিএনপিসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সারের এজেন্ট আলী আকবরকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাহবুব কায়সার ২২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর।
৩০নং ওয়ার্ডের রূপসা স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট সেলিম কাজীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া নগরীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩১নং ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সামনের নির্বাচনী ক্যাম্পও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগরীর জিলা স্কুল কেন্দ্রে আলী আকবরকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর সমর্থকরা। পরে তাকে উদ্ধার করে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুব কায়সার বলেন, আমার এজেন্ট আলী আকবর সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে জিলা স্কুল কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর লোকজন তাকে মারধর করে। কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। তাকে উদ্ধার করে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আলী আকবরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি দেখছি।
অপরদিকে ২২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর ছোট ভাই কাজী বেলায়েত হোসেন নতুন বাজার হাজী আবু হানিফ কেরাতুল কোরআন নূরানী মাদরাসা কেন্দ্রে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেননি। খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রের আটটি বুথেও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ধানের শীষের কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেয়নি। তবে এ কেন্দ্রের ৬নং বুথে ধানের শীষের এজেন্ট সিরাজুল ইসলাম লিটন মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর উপস্থিতিতে সকাল ১০টায় কেন্দ্রে ঢুকতে সক্ষম হন।
লিটন অভিযোগ করেন, তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করলে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাকে বাধা দেয়। এ কারণে তিনি ঢুকতে পারেননি।
খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ডের জামিয়াহ ত্বৈয়্যেবাহ নূরানী তালিমুল কোরআন মাদরাসা কেন্দ্র থেকে সহোদর সিরাজকে কুপিয়ে আহত এবং আলমকে মারধর করা হয়। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ওয়ার্ডে জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল উলুম বয়স্ক মাদরাসা কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী জামান মোল্লা জেলিনের এজেন্ট আসাদ ও হাবিবকে সকালেই কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়।
রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইবনুর রহমান জানান, দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে ২০-২৫ জন যুবক কেন্দ্রে প্রবেশ করে দখলের চেষ্টা করে। তারা কেন্দ্রের ২ থেকে ৫নং বুথে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে ব্যালট বাক্সে ঢোকানোর চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার তাৎক্ষণিক র্যাব, বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেটকে খবর দেন। তারা আসলে যুবকরা পালিয়ে যায়।
ইবনুর রহমান জানান, এ ঘটনায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভোটগ্রহণ পুনরায় শুরু হয়।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/আরআইপি