যানজট নিরসনে খুলছে ফেনী ওভারপাসের লুপ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ১৩ মে ২০১৮

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝে গামছা বিছিয়ে শুয়ে আছেন পরিবহন শ্রমিক আবদুল জাব্বার। পাশেই বাসের বনেটে (বাসের ইঞ্জিনের ওপরের কভার) মাথা রেখে ঘুমিয়েছেন চালক মাহমুদুল। মহাসড়কের দু’পাশে সারি সারি গাড়ি। দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্লান্তির ছায়া পড়েছে চালক, সহকারী ও যাত্রীদের চোখে মুখে।

দৃশ্যটি রোববার (১৩ মে) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া এলাকার। শুধু বরতাকিয়া নয়, এমন চিত্র এখন মহাসড়কের পুরোটা জুড়েই। মহাসড়কের মহাজটের এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে নির্মাণাধীন ফেনী ওভারপাসের একটি লুপ খুলে দেয়া হচ্ছে।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এসপি মো. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের অবস্থা অনেক বলেছি। এবার আপনাদের একটি সুখবর শোনাতে চাই। ফেনী ওভারপাসের একটি লুপ আগামী ১৫ তারিখ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা হলে যানজট অনেকটাই কেটে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে গত কয়েক দিনের অবস্থা ভয়াবহ। এ ক’দিন আমরাও বসে ছিলাম না। যেখানে গর্ত ছিল তা ভরাট করেছি, কোথাও কোথাও বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যাচ্ছে। আমাদের ছেলেরা রাতদিন সড়কের আটকে পড়া মানুষের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।’

ctg-Jam

গত বুধবার (৯ মে) রাত ১২টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের দক্ষিণে চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট এবং উত্তরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর ছাড়িয়ে উভয় দিকে অন্তত ৮০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট রয়েছে। এ অবস্থায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। আজ রোববার (১৩ মে) বেলা ১২টা পর্যন্ত এ যানজট ছাড়েনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা।

চট্টগ্রামমুখী গাড়িগুলো কিছুটা ধীরগতিতে এগিয়ে গেলেও ঢাকামুখী কোনো গাড়িই নড়ছে না। সড়কে আটকা পড়ে আছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ কয়েকশ’ গাড়ি। যানজট এড়াতে কিছু বাস ও ট্রাক মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট করেরহাট হয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা অতিক্রম করে ফেনীর শহরে প্রবেশ করলেও মহাসড়কে প্রবেশ করতে পারছে না বলে জানান চালকরা।

তারা বলছেন, সীতাকুন্ড এলাকায় উল্টো পথে যান চলাচল করায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের ফেনী অংশ পার হতে সময় লাগছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এ রাস্তা পার হতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ফেনীর ফতেহপুর এলাকার লেভেল ক্রসিংয়ের ওভারপাস নির্মাণকাজের জন্য এ যানজট। তবে যাত্রী ও গাড়িচালকদের অভিযোগ, হাইওয়ে পুলিশের ও ফেনী পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে এ ভোগান্তি।

ctg-Jam

শ্যামলী পরিবহনের চালক রাজন মিত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। এ যানজট কখন থেকে শুরু হয়েছে, তা বলতে পারব না। আমি মিরসরাই সদরে ভোর চারটা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আছি। গাড়ি এক চুলও নড়েনি।’

এস আলম পরিবহনের যাত্রী চট্টগ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাত ৯টায় ফকিরাপুল থেকে গাড়ি ছেড়েছে। সকাল ১০টা বাজে, এখনও চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারিনি।’

মহাসড়কে চাঁদাবাজি হচ্ছে না দাবি করে ফেনীর মহীপাল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফেনীর রেলগেট এলাকায় মধ্যরাত হলেই রাস্তায় যানজট শুরু হচ্ছে। সেখানে রাস্তায় উন্নয়নকাজ চলায় রাস্তা একমুখী করা হয়েছে। রাতে মালবাহী ট্রাকের চাপ বাড়লেই শুরু হয় এ তীব্র যানজট।’

ctg-Jam

চট্টগ্রামের বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আহসান হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘লরি ও ট্রাক চালকরা যানজটের জন্য অনেকাংশে দায়ী। যানজট দেখলেই রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে সরে পড়েন চালক, এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যানজট তীব্রতা পাচ্ছে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোও যানজটের একটি বড় কারণ।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। নানা কারণে মাঠপর্যায়ে কাজ পিছিয়ে পড়ায় ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ওই বছরের ২ জুলাই চার লেন মহাসড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ফেনীর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের বিষয়টি মাথায় রেখে যানজট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এমনকি যানজটের কারণ চিহ্নিত করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সওজ অধিদফতরকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল সেগুলোই মানা হয়নি।

আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।