বিয়ের ৩ দিন পর স্বামী জানলেন স্ত্রী অন্য কারো বউ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৯:০৬ পিএম, ০৯ মে ২০১৮

ভাই সেজে মাদারীপুরের শিবচরে নিজের স্ত্রীকে বিয়ে দিয়েছেন এক স্বামী। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার প্রতারক স্বামী-স্ত্রীকে আটক করে শিবচর থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। ওই নারীর এটি চতুর্থ বিয়ে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীরা জানায়, এক বছর আগে উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর গ্রামের পাঁচ সন্তানের জনক সোহরাব শেখের (৬০) স্ত্রী মারা যায়।

সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করে সোহরাব। পনের দিন আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিপাড়া ইউনিয়নের তোজাপুর গ্রামে সোহরাবের মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে আয়না বেগম (৪০) নামের এক নারী ভিক্ষা করতে যায়।

এ সময় আয়না বেগম নিজেকে নিঃসন্তান ও বিধবা বলে পরিচয় দেয়। এ কথা শুনে সোহরাবের মেয়ে ও মেয়ের জামাই তার বাবার সোহরাব শেখের জন্য আয়নাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে আয়না বেগম রাজি হয়ে যায়।

পরদিন আয়না বেগমকে শিবচরে সোহরাবের বাড়িতে বিয়ের জন্য নিয়ে যায় মেয়ে ও মেয়ের জামাই। কিন্তু গ্রামবাসী আয়না বেগমের আত্মীয়-স্বজন বা অভিভাবক ছাড়া বিয়ে দিতে আপত্তি জানায়।

এর পরদিন আয়না বেগম ফুপাতো ভাই পরিচয়ে চাঁন মিয়া খানকে (৫০) সোহরাবের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে কাজি ডেকে সোহরাব ও আয়নার বিয়ে দেয়া হয়।

বিয়েতে ১০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। বিয়ের কাবিন নামায় আয়নার বিয়ের সাক্ষী ও অভিভাবক হিসেবে চাঁন মিয়া স্বাক্ষর করে। সেখানে নিজেকে আয়নার ফুপাতো ভাই বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর তিনদিন ভালোই কাটছিল আয়না ও সোহরাবের নতুন সংসার।

গত সোমবার চাঁন মিয়া দুলাভাই সোহরাব শেখকে ফোন করে বাড়িতে নতুন ধান উঠেছে বলে জানায়। তখন আয়না বেগমকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। সোহরাবও তাতে রাজি হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে চাঁন মিয়া আয়নাকে নিতে সোহরাবের বাড়িতে যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির লোকজনের চাঁন মিয়া ও আয়নার আচার-আচরণে সন্দেহ হয়।

একপর্যায়ে এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুইজন স্বীকার করে স্বামী-স্ত্রী। পরে এলাকাবাসী গ্রাম পুলিশের সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে প্রতারক স্বামী-স্ত্রীকে থানায় সোপর্দ করে।

প্রতারক আয়না ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিপাড়া ইউনিয়নের তোজাপুর গ্রামের মৃত আমের আলী মাতব্বরের মেয়ে। এটি তার চতুর্থ বিয়ে। তিনি দুই সন্তানের জননী। প্রতারক চাঁন মিয়া একই ইউনিয়নের পল্লীবেড়া গ্রামের মৃত হানিফ খানের ছেলে। আয়না ও চাঁন মিয়ার এটি তৃতীয় বিয়ে।

এ ঘটনায় বুধবার বিকেলে প্রতারণার শিকার সোহরাব শেখ বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় প্রতারক স্বামী-স্ত্রীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

প্রতারণার শিকার সোহরাব শেখ বলেন, চাঁন মিয়া ফুপাতো ভাই পরিচয়ে কাবিননামায় সই দিয়ে আয়নার সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের তিনদিন পর দেখি ওরা স্বামী-স্ত্রী। প্রতারণা করে ওরা আমার টাকা-পয়সা, সম্পদ লুট করে আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে।

প্রতারক আয়না বলেন, এটি আমার চতুর্থ বিয়ে। প্রথম স্বামী নয় বছর আগে দুই বাচ্চা রেখে মারা যান। পরেরজন বরিশালের বাসিন্দা। ১০ দিন সংসার করে পালিয়ে যায়। চাঁন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। চাঁন মিয়া ফুপাতো ভাই সেজে সোহরাবের সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছেন। আমাগো ভুল হয়ে গেছে।

প্রতারক চাঁন মিয়া শেখ বলেন, আয়না বেগম সোহরাবকে বিয়ে করতে চায়। তাই আমি ফুপাতো ভাই সেজে আয়নার বিয়ে দিয়েছি। আমরা ভুল করেছি। আমাগো মাফ কইরা দেন।

পাঁচ্চর ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার ধারণা এরা প্রতারক চক্র। তারা নিজেরাই সব দোষ স্বীকার করেছে। প্রতারক না হলে এমন জঘন্য কাজ করা সম্ভব নয়।

শিবচর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শাজাহান মিয়া বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তারা উভয়ই দোষ স্বীকার করেছে। মূলত তারা স্বামী-স্ত্রী। বিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছে তারা। তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এ কে এম নাসিরুল হক/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।