মাদক ব্যবসা নিয়ে বগুড়ায় ৪ যুবক খুন
বগুড়ার শিবগঞ্জে চার যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতের কোনো এক সময় তাদেরকে হত্যা করা হয়। সোমবার উপজেলার বাদলাদীঘি গ্রামের একটি বিলের ধানখেত থেকে ওই চারজনের মরেদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এলাকায় মাদক ব্যবসা ও জুয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধারের সময় নিহতদের প্যান্টের পকেট থেকে হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজার পুড়িয়া উদ্ধার করেছে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের কাঠগাড়া গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে পানের দোকানি সাবরুল ইসলাম (৩৫) ও একই গ্রামের রঙ মিস্ত্রি জহুরুল ইসলামের ছেলে জাকারিয়া ইসলাম (৩২) এবং পাশের জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের পাঁচপাইকার চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের আজাহার উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩৬)। এর মধ্যে সাবরুল ইসলামের ভাইয়ের পুকুর বন্দরে পানের দোকান রয়েছে। অপর একজনের নাম-পরিচয় এখনও পুলিশ জানতে পারেনি।
নিহতদের প্রত্যেকের গলাকাটা ছিল। পরনে লুঙ্গি ও প্যান্ট ছিল। এরমধ্যে দুইজনের হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। আর একজনের একটি পা কাটা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী মোজাম্মেল মিয়া ও আবদুর জোব্বার জানান, আটমূল ইউনিয়নের আলিয়ারহাটের উত্তরে বেতগাড়ি গাংনই নদীর পশ্চিমে ডাবইর এলাকার ধানখেতে চারজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, বেতগাড়ি-কিচক সড়ক থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ডাবইর পাথার বলে পরিচিতি ধানখেতে মরদেহগুলো পড়ে ছিল। দুটি ধানখেতে পাশাপাশি চারজনের মরদেহ পড়ে ছিল। এরমধ্যে দুইজনের হাত বাঁধা ছিল। স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখে কাঠগারা গ্রামের জাকারিয়া ও শাহাবুলকে শনাক্ত করেন। পরে বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশ হেলালের পরিচয় নিশ্চিত করে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পুলিশ আরেকজনের পরিচয় জানতে পারেনি।
এদিকে একসঙ্গে চারটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকার লোকজন ভয়ে মুখ খুলছেন না। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটমুল ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ভায়ের পুকুর বাজার। এই বাজারে দীর্ঘদিন যাবৎ জুয়া ও মাদক ব্যবসা চলে আসছিল। জুয়া ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এলাকায় নানা ধরনের গ্রুপিং চলছিল। মাস খানেক আগে এসবের জের ধরে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সেলিম নামের একজনকে অস্ত্রসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। সেলিমকে গ্রেফতারের পেছনে তার প্রতিপক্ষের লোকজনের হাত রয়েছে দাবি করে সেলিম গ্রুপের লোকজন প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ভায়েরপুকুর বাজারে মহড়া দিচ্ছিল। সম্প্রতি সেলিম জামিনে আসার পর এলাকায় তার পক্ষের লোকজন তৎপর হয়ে ওঠে। রোববার সন্ধ্যার পরও সেলিমের লোকজন মোটরসাইকেল যোগে ভায়েরপুকুর বাজারে মহড়া দেয়।
নিহত শাহাবুলের বাবা আছির উদ্দিন জানান, তার ছেলে শাহাবুল ভায়েরপুকুর বাজারে পান সিগারেটের দোকান করতো। রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত শাহাবুল দোকানে ছিল। রাতে তার তাকে দোকানে বসিয়ে ঢাকায় যেতে হবে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায় শাহাবুল। এরপর রাতে আর বাড়ি ফেরেনি।
এদিকে চার খুনের খবর পেয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ও শিবগঞ্জ ও সোনাতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান মন্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ ও ডিবির টিম নিয়ে তারা ধানখেতের হাঁটু পানি মাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে নানা ধরনের আলামত পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে পুলিশ সুপার বলেন, নিহতদের পেশা ও যাদের সাথে চলাফেরা করতো তাদের সর্ম্পকে খোঁজ খবর না নেয়া পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ বলা সম্ভব হবে না। তিনি জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
আটমূল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন জানান, নিহতরা সবাই আটমূল ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়ার মতো না। তবে ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাহিদ হোসেন মণ্ডল জানান, নিহতদের প্রত্যেকের কাছেই গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনের পুড়িয়া পাওয়া গেছে। জাকারিয়া ওই এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী।
লিমন বাসার/আরএআর/এমএস