বাক্সেই নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ
ফেনীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ২৫ শয্যার ট্রমা সেন্টারের জন্য পাওয়া কোটি টাকা মূল্যের সরঞ্জামাধি দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। সরবরাহের পর থেকে কখনও এসব বাক্স খুলে দেখাও হয়নি। বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হওয়া অব্যবহৃত এসব সরঞ্জামাধি মরিচা ধরেছে। সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে ৩টি অটোক্লেব, ৩টি স্টেরিলাইজার ও ২টি বড় জেনারেটর মেশিন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের জন্য একটি বড় জেনারেটর মেশিন পাঠানো হয়। পরে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার থেকে ২০১০ সালে আরেকটি বড় জেনারেটর মেশিন সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জেনারেটরের জন্য তেল বরাদ্ধ না থাকায় এসব মেশিন ২০ বছর পার হলেও কোনোদিন চালু করা হয়নি। প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় কেনা জেনারেটরগুলো সক্রিয় করতে না পারায় লোডশেডিংয়ের সময় হাসপাতালটি অন্ধকারে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়। তবে লোডশেডিংয়ের সময় রোগীর দেওয়া ছোট একটি জেনারেটর দিয়ে অপারেশন থিয়েটার ও গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বড় জেনারেটরগুলো চালাতে প্রতি ঘণ্টায় ১৭ লিটারের বেশি তেল লাগবে বলে এগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের স্টোর কিপার আবদুর রব জানান, ২০০৩ সালের ২২ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে ৩টি স্টিম স্টেরিলাইজার যন্ত্র ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের জন্য সরবরাহ করা হয়। যার মূল্য ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৫৫০ টাকা। একই সঙ্গে একটি বড় আকারের ফার্স্ট অটোক্লেব যন্ত্র সরবরাহ করা হয়। হাসপাতাল থেকে কোনো চাহিদাপত্র ছাড়া জীবাণুনাশক স্টিম স্টেরিলাইজার ও অটোক্লেব যন্ত্রটি পাঠায় সিএমএসডি। একইভাবে ২০০২ সালের ৮ আগস্ট একটি অটোক্লেব ও পরে ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ আরও একটি অটোক্লেব যন্ত্র ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার।
এছাড়াও আরও একটি অটেক্লেব যন্ত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মহিপাল ট্রমা সেন্টারের জন্য সরবরাহ করা হয়। পৃথক সময়ে সরবরাহকৃত ৪টি অটোক্লেবের মূল্য ১৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এ যন্ত্রগুলো বসানোর জন্য হাসপাতালে বড় আকারের কোনো আলাদা কক্ষ নেই। তাছাড়া এসব যন্ত্রের বাক্সগুলো আকারে অনেক বড় হওয়ায় কোনো কক্ষে রাখা যায়নি। প্রায় ১৪ বছর পর্যন্ত ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের বারান্দায় চলাচলের পথে এ বাক্সগুলো রাখা ছিলো। এতে করে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের ঠিকাদাররা গাড়ি থেকে নামিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় রাখার পর থেকে এসব বাক্সগুলো একবার খুলে দেখা হয়নি বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানায়, অব্যবহৃত এসব যন্ত্রগুলো বসানোর ব্যবস্থা অথবা ঢাকায় ফেরত নিতে ২০০৩ সালের ৩ অক্টোবর, ২০০৪ সালের ১১ মার্চ, ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল ও ৮ মে, ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ও সর্বশেষ ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় ঔষুধ ভাণ্ডারকে অনুরোধ করা হলেও কোনো ফল হয়নি।
আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অসীম কুমার সাহা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত ও সরবরাহকৃত অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির তালিকা চাওয়া হয়। ওই তালিকায় অব্যবহৃত ৩টি যন্ত্রগুলোসহ ৬ প্রকারের যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাছ থেকে এবিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই চলতি বছরের সরঞ্জামাদির বাক্সগুলো হাসপাতালের বারান্দা থেকে সরিয়ে স্টোর রুমে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করা ছোট একটি অটোক্ল্যাব মেশিন দিয়ে যন্ত্রপাতি জীবাণু মুক্ত করে কোনো রকমে জরুরী কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ফেনী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে জানান, স্টিম স্টেরিলাইজার ও অটোক্লেব মেশিনগুলো স্থাপনের জন্য হাসপাতাল ভবনে কক্ষ, প্রয়োজনীয় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বার বার গণপুর্ত বিভাগকে এগুলো বসানোর জন্য সহযোগিতা চাওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। ফলে হাসপাতালে এসব যন্ত্র স্থাপন করা যায়নি। আর তেল বরা্দ্দ না থাকায় জেনারেটরগুলো সচল করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে স্টেরিলাইজার, অটোক্লেব ও জেনারেটরগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরএ/এমএস