ক্রাইম পেট্রোল দেখে খুনের পর স্ত্রীর মাথা আলাদা করে ইব্রাহিম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০১:৫৩ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

নদী থেকে উদ্ধার করা মস্তকবিহীন এক নারীর মরদেহ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশ। ‘ক্লু-লেস’ এ হত্যা মামলার তদন্তভার পড়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জিয়াউল হকের উপর। তবে মস্তক না পাওয়া গেলেও মরদেহের পরিচয় নিশ্চিতের পাশাপাশি হত্যকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। মরদেহটি জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে ইয়াসমিন আক্তারের (২২)।

দেনমোহরের টাকা নির্ধারণ নিয়ে স্বামী ইব্রাহিম আলী বাবু (৩০) নিজেই শ্বাসরোধ করে ইয়াসমিনকে হত্যার পর ফল কাটার ছুরি দিয়ে মাথা কেটে আলাদা করেন। নিজে বাঁচার জন্য ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ক্রাইম পেট্রোল দেখে স্ত্রীর মাথা আলাদা করে ঘাতক ইব্রাহিম। পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে হত্যকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে সে। জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিয়াউল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকার তিতাস নদীতে একটি বস্তা ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তাটি খুলে দেখেন এক নারীর মস্তকবিহীন মরদেহ। মস্তক না থাকায় মরদেহটি কার সেটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় জিয়াউল হককে। এছাড়া মামলার সার্বিক তদারকি করেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল কবির।

পরবর্তীতে জানা যায়, মরদেহটি ইয়াসমিন আক্তারের। ইয়াসমিনের মা মনোয়ারা বেগম জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে এসে তার মরদেহ শনাক্ত করেন। এরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়াসমিনের স্বামী অটোরিকশা চালক ইব্রাহীমকে আটক করে পুলিশ।

ইব্রাহিম জেলা সদরের ভাদুঘর দক্ষিণপাড়ার রমজান আলীর ছেলে। গত পাঁচ বছর আগে প্রেম করে ইব্রাহিম ও ইয়াসমিন বিয়ে করেন। তাদের মাইশা নামে চার বছরের এক কন্যা শিশুও রয়েছে। তবে ইব্রাহিমের বাবা-মা বিয়ে মেনে না নেয়ায় ইয়াসমিনকে নিয়ে শহরের কাউতলি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো তারা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ইয়াসমিনের মা ২১ এপ্রিল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল। আমরা তার উপর ভিত্তি করে ইয়াসমিনের স্বামী ইব্রাহিমকে কাউতলি থেকে আটক করি।

সে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, দেনমোহরের টাকা নির্ধারণ নিয়ে প্রায়ই ইয়াসমিনের সঙ্গে ঝগড়া হতো। ইয়াসমিনের দাবি ছিল দেনমোহর তিন লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ টাকা করা। ইব্রাহিম এতে রাজি থাকলেও কাজীর ‘ফি’ দেয়ার জন্য তার কাছে কোনো টাকা ছিল না। কিন্তু ইয়াসমিন বারবার তাকে দেনমোহর নির্ধারণ নিয়ে 'জ্বালাতন' করতো।

সে আরও জানায়, ১৬ এপ্রিল রাতে ঘুমানোর সময় ইয়াসমিন আবারও দেনমোহরের কথা তোলে। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ইব্রাহিম ঘরে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে ইয়াসমিনের গলায় প্রথমে আঘাত করে। পরে গলা থেকে রক্ত বের হলে নাকে-মুখে চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে ইয়াসমিনকে হত্যা করে সে। ক্রাইম পেট্রোলে সে দেখেছে শরীর থেকে মাথা আলাদা করলে পরিচয় জানা যায় না। এতে করে হত্যার বিচারও হয় না। সে জন্য ইয়াসমিনের মাথা আলাদা করে সে। পরদিন ১৭ এপ্রিল ভোরে একটি বস্তায় ভরে প্রথমে ইয়াসমিনের মরদেহ অটোরিকশায় করে নিয়ে গিয়ে তিতাস নদীতে ফেলে দেয়। এরপর কাউতলি সড়ক সেতুর উপর থেকে কুরুলিয়া খালে ফেলে ইয়াসমিনের মাথা।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।