‘ভাবতেই পারিনি স্যারের মৃত্যু আমার গাড়িতেই হবে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

‘একজন মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার পরপরই চিন্তা করি কখন রংপুর মেডিকেলে পৌঁছাব। প্রতিটি রোগীকেই আমার আপনজন মনে হয়। নিজের মনে করে আল্লাহকে স্মরণ করেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রওয়ানা হই রংপুরের দিকে। রোগীর স্বজনদের কান্নায় অনেক সময় নিজেও কেঁদে ফেলি। টাকা-পয়সা বড় নয়, মানুষের জীবন রক্ষাই বড়। রোগীকে বহন করাই আমার ধর্ম’।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট জেলার সীমান্তবর্তী পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালাক আজম আলী (৪৫)।

জানা যায়, আজম আলী এসএসসি পাস করে ২০০৪ সালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। সে থেকেই জেলার পাঁচটি উপজেলায় অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবেই চাকরি করেন। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের খেদাবাগ গ্রামের মনিরুজ্জামান ব্যাপারীর ছেলে তিনি। সংসারে স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে-মেয়ে দুইজনই প্লে শ্রেণিতে পড়ে।

আজম আলী জীবন-মৃত্যুর খেলায় মর্মস্পর্শী অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। প্রতিনিয়তই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগী ও তাদের মরদেহ বহন করে চলছেন। উপজেলার একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চালক হওয়ায় ২৪ ঘণ্টাই রোগী বহন করতে হয় তাকে। চাকরির ১৪ বছরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার অ্যাম্বুলেন্সে প্রায় শতাধিক শিশুর জন্ম হয়। মৃত্যু হয় শিশুসহ প্রায় ৩০ জনের।

media

অ্যাম্বুলেন্স চালক আজম আলী বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে বড় একটি ঘটনা আমি আজও ভুলিনি। ২০১১ সালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বদলি হই। তখন পাটগ্রাম স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছিলেন আনারুল ইসলাম সাজু স্যার। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তিনি আমার অ্যাম্বুলেন্সে রোগী হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে যাওয়ার পথে ঠিক হাসপাতালের গেটে মৃত্যুবরণ করেন। আমি কোনো দিন ভাবতেই পারিনি আমার স্যারের মৃত্যু আমার গাড়িতেই হবে। এ ঘটনাটি আমার জীবনে হৃদয় বিদারক’।

পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বহুল আলোচিত তিন বিঘা দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাতাপালে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালকের অভাবে পড়ে আছে। পাটগ্রাম থেকে রংপুর প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দুই হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বে-সরকারিভাবে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ায় চলাচল করে।

পাটগ্রাম স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা হাসপাতালে চিকিৎসকসহ অ্যাম্বুলেন্স চালক সঙ্কট রয়েছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

রবিউল হাসান/আরএআর/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।