কক্সবাজারে ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা কবলিত উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় ভেসে গেছে মৎস্য খামার। দুর্গত এলাকার মানুষ খাদ্য ও পানীয় জল এবং দিনযাপনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ পর্যন্ত পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজন নিখোঁজ ও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্গত এলাকার লোকজন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের বন্যায় পাঁচ উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে। এসব উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ঢলের পানিতে ডুবে থাকায় মানুষের স্বাভবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের সময় সাগরের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগ তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া, খরুলিয়া, দরগাহপাড়া, পোকখালীর মধ্যম পোকখালী, নাইক্ষ্যংদিয়া, চৌফলদন্ডী, নতুন মহাল, ঈদগাঁওর মাইজপাড়া, ভাদিতলা, ভোমরিয়াঘোনা, কানিয়ারছরা, ঈদগাঁও বাজার এলাকা, কালিরছড়া, রামুর উপজেলার ধলিরছরা, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, উত্তর মিঠাছড়ি, পূর্ব ও পশ্চিম মেরংলোয়া, চাকমারকুল, কলঘর, লিংকরোড়, চকরিয়ার উপজেলার ভাঙ্গারমুখ, ফাসিয়াখালী, মালুমঘাট, ডুলহাজারা, খুটাখালী, ফুলছড়ি, ইসলামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় পানি সড়কের সমান্তরালে অবস্থান করছে। খুটাখালী, কালিরছড়া, মালুমঘাট, রামু বাইপাসসহ আরো একাধিক স্থানে ঝড়ো হাওয়ায় মহাসড়কে উপড়ে গেছে ছোট-বড় অনেক গাছ।
রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান, পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে রামু উপজেলার রাজার কুল গ্রামের ছিদ্দিক আহমদের ছেলে আব্দুস সালাম (১৮), কচ্ছপিয়া গ্রামের ১৩ দিনের নবজাতক ও চাকমারকুলে ২ বছর বয়সী আবছারুল ইসলাম বানের পানিতে ভেসে নিখোঁজ রয়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, পৌরসভার ভরামুহুরী এলাকায় এক শিশু ও পূর্বভেওলায় এক ব্যক্তি সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে পানিতে আটকে পড়ে আব্দুল পন্ডিতের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৫০) ও দেয়াল ধসে খুটাখালীতে ইউসুপ আলীর প্রতিবন্ধী মেয়ে রোকেয়া বেগম (২৮) এর মৃত্যু হয় ।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাহাদুর জানান, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, পাহাড়ি ঢল ও নাফ নদীর জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে গেছে প্রায় শত শত একর চিংড়ি ঘের। উখিয়ায় সড়কে গাছ পড়ে ও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে শনিবার মধ্যরাত থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে মেরিন ড্রাআভ সড়ক দিয়ে বিকল্পভাবে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার লোকজন।
উপজেলার রেজু খাল দিয়ে বিপদসীমার উপর পানি প্রবাহিত হওয়া দুই পাড়ে বসবাসরত প্রায় দুই শতাধিক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ১৮টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিকদার বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মহেশখালীতে সড়ক ভাঙনের কবলে পড়ায় বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। টানা বর্ষণের কারণে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টাও করা যাচ্ছে না।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বমু বিলছড়ি মানিকপুর-সুরাজপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, চিরিঙ্গা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, শাহারবিল, পূর্ব বড়ভেওলা, বিএমচর, কোনাখালী ও হারবাং ইউনিয়নে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে।
গত ৩০ জুনের বন্যায় ভাঙনের কবলে পড়া বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে ঢলের পানি। আবারো ভেঙে গেছে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগর ঘোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। সুরাজপুর-মানিকপুর সড়ক ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষে দুর্ভোগের অন্ত নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই অবস্থা বিরাজ করছে পেকুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। এমনটি জানিয়েছেন পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু।
এসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বন্যা কবলিত অঞ্চলকে `দুর্গত এলাকা` ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এখনো দুর্গত এলাকায় কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা। সদ্য গত রমজানে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় সপ্তাহব্যাপী পানিবন্দি থাকার পর হঠাৎ করে আবার বন্যা দেখা দেওয়ায় মহাদুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও উন্নয়ন) ড. অনুপম সাহা জানান, রামু, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় শীঘ্রই সরকারি ত্রাণ পৌঁছানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/আরআইপি