স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামীর করুণ পরিণতি
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও কলেজ গেইট ব্রিজ এলাকার খালপাড় থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি মরদেহের পরিচয় মিলেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মরদেহ উদ্ধার হবার দু’দিনের মাথায় শনিবার তার পরিবারের লোকজন হাসপাতাল মর্গে এসে মরদেহ শনাক্ত করেছেন।
উদ্ধার হওয়া মরদেহটি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটপাড়া এলাকার মৃত হাজী আবু ছৈয়দের ছেলে মুহাম্মদ খালেদের (২৮)। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। সদরের খুরুশকুল তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়ার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদার সঙ্গে খালেদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে শ্বশুরবাড়িতে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ও স্ত্রীর ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের করা মামলায় নিহত খালেদের ভাই বাদী হয়ে দাবি করেছেন- শনিবার (১৪ এপ্রিল) শ্বশুরবাড়িতে গেলে সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়।
নিহত খালেদের ছোট ভাই আবদুল মান্নান জানান, তাদের ৮ ভাইয়ের মধ্যে খালেদ ৫ম। গত বছরের ২০ নভেম্বর সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়া এলাকার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদা হকের সঙ্গে খালেদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন স্বাভাবিক আচরণ করলেও মাস দুয়েক পর জোবাইদা স্বামী খালেদসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতে শুরু করে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায় বিয়ের আগে অন্য ছেলের সঙ্গে জোবাইদার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরও ওই সম্পর্ক চলছিল।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে জোবাইদা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় মার্চ মাসে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তার বাবা-মা তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ২৫ মার্চ চলমান তিনমাসের সন্তান নষ্ট করা হয়। এনিয়ে খালেদের সঙ্গে মুঠোফোনে বাকবিতণ্ডা হয় জোবাইদার। একপর্যায়ে পুরনো প্রেমিককে দিয়ে খালেদকে গালিগালাজ করিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
আবদুল মান্নান বলেন, এসব বিষয় আমার সঙ্গে শেয়ার করার পর খালেদকে শ্বশুরবাড়ি যেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সন্তান নষ্ট করা ও স্ত্রী অন্যজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় খালেদ শনিবার শশুরবাড়ি যান। তাকে বলেছিলাম একলা না গিয়ে সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে। কথা না শোনায় তাকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হলো।
ঝিলংজা ইউপির স্থানীয় সদস্য আবদুর রশিদ বলেন, খালেদ কর্মঠ ছেলে। সে সারাদিন রাজমিস্ত্রির কাজ করে এসে সন্ধ্যায় এলাকায় একটি পানের দোকান করত। পারিবারিক কলহের কথা শুনেছি কিন্তু এতটা প্রকট তা জানা ছিল না। স্বামী-স্ত্রী ও স্ত্রীর পুরনো প্রেমিকের বাকবিতণ্ডা মুঠোফোনে রেকর্ড রয়েছে বলেও জেনেছি।
ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, খালেদকে হত্যার পর নিজেদের আড়াল করতেই মরদেহটি বস্তাবন্দি করে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে খালে ফেলে আসে হত্যাকারীরা। এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি আমরা।
খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। শুনেছি এ ঘটনায় স্ত্রী ও তার বোন জামাইকে পুলিশ আটক করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জোবাইদার বড় ভাই মোহাম্মদ আবছারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, আবছার একটু দূরে রয়েছেন। তিনি আসলে কল ব্যাক করে কথা বলবেন।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, মরদেহ উদ্ধারের পরই অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছিল। এখন পরিচয় মিলেছে। হত্যার পেছনে নিহতের স্ত্রীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই তাকে ও তার ভগ্নিপতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তথ্য মিলে গেলে ঘটনায় জড়িতদের আসামি করে কারাগারে পাঠানো হবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/আরআইপি