৯০ বছরের নয়তন নেছার সঙ্গেও ধোঁকাবাজি
গত ২ এপ্রিল বয়স ৯০ ছাঁড়িয়েছে। দিনমজুর স্বামী রবি উল্লাহ অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন ৪৭ বছর হলো। ছেলে সন্তান নেই। থাকার মধ্যে ছিল তিনজন মেয়ে। ইতোমধ্যে এক মেয়েও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। নিজের ভিটে-মাটি না থাকায় এই বয়সে এসে রাত জাগার জন্য বেছে নিয়েছেন মেয়ের বাড়ি। আর ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার পরই আহার জোগাতে কাজে যেতে হয় অন্যের বাড়ি।
নানান রোগে বাঁধা শরীর নিয়ে যে দিন কাজে যেতে পারেন না, সেদিন আর পেটে আহার জোটে না। এমন এক অসহায়, সমাজের দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করা নয়তন নেছার বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া নগরহাওলা গ্রামে। এভাবেই চলছে তার জীবন সংগ্রাম। তবে উল্লেখ করার বিষয় যে ৯০ বছর বয়সেও অসহায় নয়তন নেছার ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি সহায়তা কার্ড।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়ের বাড়িতে কথা হয় নয়তন নেছার সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন মেয়ে নিয়ে ছিল তার কষ্টের সংসার। নিজে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে এক মেয়ে মারা যান। দুই মেয়ের পরিবারও খুবই দরিদ্র। নিজের ভিটেমাটি না থাকায় এখন শেষ বয়সে এসে মেয়েদের বাড়িতে আশ্রিতা হতে হয়েছে তাকে। শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে। পেটের খাবারই তিনি এখন জোগাড় করতে পারেন না। শরীরে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলায় ভারি কাজ করতে পারেন না।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটকে কেন্দ্র করে খোঁজ খবর নেয়। নির্বাচন আসলে কার্ড করে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এ ধরনের স্বান্ত্বনা নিয়েই তাকে দিন কাটাতে হচ্ছে। তাই জীবনের অন্তিম সময়গুলো অতিবাহিত হওয়ার আগেই তিনি সরকারের কাছে একটি সহায়তা কার্ড দাবি করেন।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, আমি এই প্রথম ওয়ার্ড সদস্য হয়েছি। এর আগে অনেক সদস্যই ছিল। কিন্তু কেউই এই বৃদ্ধার খোঁজখবর রাখেননি। আমি খবর পাওয়ার পর তাকে একটি ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড করে দিয়েছি। বয়স্ক ভাতা অথবা বিধবা ভাতার একটি কার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে তালিকা পাঠানো হয় তার ভিত্তিতেই আমরা কার্ড সরবরাহ করে থাকি। এরবাইরেও বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার কার্ড পাওয়ার যোগ্য কেউ থাকে তাহলে আমি তার জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করে দেব।
শিহাব খান/এমএএস/পিআর