চিকিৎসা নিতে গিয়ে কারাগারে রোগী
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পুড়ছিল পাশাপাশি কয়েকটি বাড়ি। ঘুমের ঘোরে এটি জানতে পেরে প্রতিবেশীকে বাঁচাতে ছাদের উপর থেকে নিচে লাফ দেন হাসান মাহমুদ (৩৬)। এতে তার ডান হাত ও থুতনির নিচে মারাত্মক জখম হয়। কিন্তু এ ঘটনায় চিকিৎসা নিতে এসে কারান্তরীণ হয়েছেন তিনি।
ইন্টার্ন চিকিৎসকের উপর হামলার অভিযোগে করা মামলায় তিনি কারাগারে যান। কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর মুহাম্মদ ইসলামের ছেলে হাসানসহ এতে অজ্ঞাতনামা আরো ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রচার পাওয়ার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভাঙা হাত ও থুতনির জখমের আঘাতের তোড়ে নড়তে না পারা রোগী অন্যকে হামলার অভিযোগে কারান্তরীণ হওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. বজলুর রশীদ আখন্দ জানান, চিকিৎসকদের হামলায় অভিযুক্ত হাসান নামে এক যুবককে আদালতের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। তার ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা এবং থুতনির নিচে একাধিক সেলাই করা জখম রয়েছে। তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরীর করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় কলাতলীর হাসান মাহমুদকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাকে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হলে পাঁচ তলায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা সেবা নিয়ে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে রোগী হাসানসহ স্বজনরা চিকিৎসকদের মারধর করেন। তাদের প্রহারে ইন্টার্ন চিকিৎসক শাফায়েত হোসেন হাতসহ শরীরের বিভিন্নাংশে জখম পেয়েছেন।
তার দেয়া অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে চিকিৎসাধীন হাসান মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় নেয়া হয়। ১৮ এপ্রিল তাকে কোর্ট পুলিশের মাধ্যমে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। পরে সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজিব কুমার দেব অভিযুক্ত আহত হাসান মাহমুদকে কারাগারে পাঠান।
হাসান মাহমুদের আইনজীবী ফখরুল ইসলাম গুন্দু বলেন, বিষয়টি অমানবিক। মামলার বাদী নিজেই দাবি করেছেন হাসান মাহমুদ আঘাত প্রাপ্ত। ছাদ থেকে লাফ দিতে গিয়ে হাসানের ডান হাতে ফ্র্যাকচার ও থুতনির নিচে কেটে গিয়ে ৮টি সেলাই দিতে হয়েছে। এমন একজন রোগী কখনও সুস্থ মানুষের গায়ে হাত তুলতে পারে না। চিকিৎসা সেবা নিয়ে ক্ষুদ্ধ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কে বা কারা হামলা করেছে এটার জন্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কারাগারে যেতে হবে এটা সভ্য দেশে কল্পনারও অতীত।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহীন আবদুর রহমান বলেন, ইন্টার্নরা সরকারি চিকিৎসক নয়, তারা শিক্ষানবীশ হিসেবে ছাত্রই ধরা যায়। তাই তাদের মাঝে কিছুটা ছাত্রসুলভ আচরণ থাকে। ১৭ তারিখের ঘটনার পর তাদের দেয়া সাত দফা দাবি পূরণের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনও সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। কারান্তরীণ হাসানকে হামলাকারী হিসেবে দেখানো হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস